আজ জাতীয় শোক দিবস -71news24

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

শেখ গফ্ফার রহমান, একাত্তর নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম ডেক্সঃ

” ঘুমাও হে, জাতির জনক চিরো শান্তিতে, আমরা আছি জেগে তোমার সপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়বো বলে।”

আজ ১৫ আগস্ট সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ৭ মার্চের মহান কবি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থাপতিঃ

বঙ্গবন্ধু’র ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ফজরের আজানের প্রাককালে শহীদ বঙ্গবন্ধু এবং তাহার পরিবারের সদস্য-সদস্যা শিশু রাসেল এবং সুকান্ত সহ তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

__আমিন।

 

👉সেদিন যা ঘটেছিলঃ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে কাপুরুষোচিত আক্রমণ চালায় ঘাতক দল। সেই নারকীয় হামলার পর দেখা গেছে, ভবনটির প্রতিটি তলার দেয়াল, জানালার কাচ, মেঝে ও ছাদে রক্ত, মগজ ও হাড়ের গুঁড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। গুলির আঘাতে দেয়ালও ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। চারপাশে রক্তের সাগরের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ঘরের জিনিসপত্র। প্রথমতলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে আছেন চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মরদেহ। তার তলপেট ও বুক ছিল বুলেটে ঝাঁঝরা। পাশেই পড়েছিল তার ভাঙা চশমা ও অতিপ্রিয় তামাকের পাইপটি।

 

অভ্যর্থনা কক্ষে শেখ কামাল, মূল বেডরুমের সামনে বেগম মুজিব, বেডরুমে সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজি জামাল, নিচতলার সিঁড়ি সংলগ্ন বাথরুমে শেখ নাসের এবং মূল বেডরুমে দুই ভাবির ঠিক মাঝখানে বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের মরদেহ। লুঙ্গিতে জড়ানো শিশু রাসেলের রক্তভেজা মরদেহ দেখে খুনিদের প্রতি চরম ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর ভাষা খুঁজে পান না মানবতাবাদী বিশ্বের কোনো মানুষ। এভাবেই নারকীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

 

👉স্মরণীয় সেই দিনঃ

১৫ই আগস্ট,টুঙ্গিপাড়া, ১৯৭৫ ইং।

একটা হেলিকপ্টার নামল। একজন আর্মির মেজর আর কয়েকজন সিপাহী। আরেকটা কফিন। কফিন খুলে আঁতকে উঠেন ইদ্রিস আলী। এতো বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের বজ্র কন্ঠ, (এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম) মহান স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মুজিবুর রহমান!!

 

পরনে সেই চিরাচরিত সাদা পাঞ্জাবী। সারা গায়ে পঁয়ত্রিশটা বুলেটের দাগ। সেই বিখ্যাত তর্জনী গুলি করে ফেলে দিয়েছে। উপস্থিত সৈন্যদের উপর অর্ডার মুজিবের লাশ যাওয়া মাত্র দাফন করতে হবে।

তাই সৈন্যরা গোসল না করিয়ে শেখ বাড়ীর মসজিদের হুজুরকে ডেকে কোন মতে জানাজা সেরে লাশ দাফন করে ফেলতে চান। কিন্তু বৃদ্ধ হুজুর গোসল ছাড়া জানাজা পড়াতে অস্বীকৃতি জানালেন। কারণ শেখ মুজিব ছিল তার ছাত্র। বাড়ির পাশের মজা পুকুর থেকে আনা হল পানি, দোকান থেকে আনা হয় কাপড় কাঁচার ৫৭০ সাবান।

 

স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি—যে নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হত না, যিনি জীবনের ১৩ টা বছর জেলখানার সেলে কাটিয়েছেন জাতির অধিকার আদায় করতে সেই জাতির পিতাকে গোসল করানো হয় পুকুরের নোংরা পানি আর কাপড় কাচার সাবান দিয়ে। ভালো মার্কিন কাপড় না থাকায় শেখ মুজিবেরই দান করা রিলিফের কাপড় থেকে এক খন্ড কাফনের কাপড় জুটল শেখ মুজিবের কপালে।

সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে মাথা তুলে বাঁচতে শিখান যিনি, নেলসন ম্যান্ডোলা, ইয়াসির আরাফাত, কমরেড ফিদেল ক্যাস্ট্রোরা যাকে নিজেদের অনুপ্রেরনা মানত সেই মানুষটার জানাজা পড়ল মাত্র ১৬-১৭ জন।

এলোনা কোন বিশ্বনেতা…

পরের দিন লন্ডনের বিখ্যাত দা ডেইলি টেলিগ্রাম পত্রিকায় একটি বিশ্রি সত্য শিরোনামে এলো এই করুন মৃত্যুই যদি মুজিবের ভাগ্যে ছিল তাহলে বাংলাদেশ সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন ছিলনা।

 

ফিরে যাই ৭২ এ বাংলার মেয়েরা , হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতন ধর্ষণের পর ঘরে ফিরে পেল মানসিক নির্যাতন। বাপ মেয়েকে ঘরে নিতে অস্বীকার করল, স্বামী বউকে তালাক দিল।  সমাজ তাদের বয়কট করল। অপমানে লজ্জায় আত্মহত্যা গাছের ডালে ফাস দিয়ে আত্নহত্যা করল বাংলার বীরাঙ্গনারা। কার জন্য ইজ্জত গেল কার জন্য নির্যাতন সহ্য করলাম। সে খবর গেল ধানমন্ডি ৩২ এ শেখ মুজিবের কানে। বুক চাপড়ে কেদে কেদে বললেন মুজিব “কেউ যদি বীরাঙ্গনাদের পিতার নাম জিজ্ঞেস করে তবে বলে দিও তাদের পিতা  “শেখ মুজিবর রহমান” আর তাদের ঠিকানা স্থানে লিখে দিও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর।”

 

👉দেশ গড়ার শপথ নেও প্রজন্মঃ

সেই কালো ফ্রেমের চশমা পড়া হিমালয় কে চিনে নিও প্রজন্ম। তোমাকে করতে হবে তার আদর্শ ধারণ, তোমার মনে থাকবেনা কোন আত্মঅহংকার,  তুমি হবেনা কখনো মেহনিতী মানুষের শত্রু, শোষণ ও দুর্নীতি মুক্ত বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর,  জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কমরেড অমল সেন, ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়তে থেকো সর্বদা প্রস্তুত।

 

👉জাতির জনকঃ

শেখ মুজিবুর রহমান কারো পৌত্রিক সম্পত্তি না, তিনি দুর্নীতি ও চোর মুক্ত সোনার বাংলাদেশের সপ্নদ্রষ্ঠা, বাংলার কৃষক-শ্রমিক এবং খেটে খাওয়া মেহনিতী মানুষের ” বঙ্গবন্ধু”।

 

👉জঘন্যতম এ হত্যাকান্ডের বিচারের রায় কার্যকরের দাবীঃ

টানা দুইবারসহ আওয়ামী লীগ তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায়! মাত্র বজলুল হুদা সম্ভবত থাইল্যান্ডে সোনা চুরি করে ধরা পরায় এবং ভারতে পলাতক ক্যাপটেন মাজেদকে দেশে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করেছে!

বিভিন্ন দেশে পাতক বাকি পাঁচজনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আওয়ামিলীগ সরকারের কোনো সাফল্য এখনও দৃশ্যমান নয়! এবিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সত্যিই হতাশাজনক! এদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা এখন  সকলের জোর দাবী!

 

উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যাকারী খুনিদের পঁয়ত্রিশ বছর পর পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হলেও এখনো আরও ছয়জন বিভিন্ন দেশে ধাওয়া খাওয়া শিয়াল-কুত্তার মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছে!

মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লেঃ কর্ণেল (বরখাস্ত) খন্দকার আব্দুর রশিদ, মেজর (অবঃ) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) এ এম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খাঁন।

সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবী, এদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর করে হোক।

Please follow and like us: