ইতিহাসের প্রথম নারীবাদি লেখিকা, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম খ্যাতিমান সাহিত্যিক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যুদিন আজ।
নারী জাগরণ ও নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, শিক্ষাব্রতী, সমাজ সংস্কারক এই মহীয়সী নারীর আজ ৮৭তম মৃত্যুদিন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর, মাত্র ৫৩ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।
ঊনবিংশ শতকের শেষে এবং বিংশ শতকের প্রথমে যেসব নারী লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তাদের মধ্যে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন গভীরভাবে সমাজ সচেতন ও যুক্তিবাদী। অন্যদিকে সমাজ পরিবর্তনে একনিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে ছিলেন উজ্জ্বল পথিকৃৎ। সমাজ-সাহিত্য-নারী বিষয়ে এগিয়ে থাকা একজন মানুষ হিসেবে তার উত্তর প্রজন্মের নারীরা তার কাছ থেকে পেয়ে আসছেন অনুপ্রেরণা ও সংগ্রাম-অধিকার-জাগরণের প্রেষণা, যা এখনো এক প্রধান উৎসমূল।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে, জমিদার পরিবারে। আনুমানিক ১৬ বছর বয়সে বিহারের অধিবাসী বিপত্নীক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তার নাম হয় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তবে তিনি বেগম রোকেয়া নামেই সমধিক পরিচিত।
তার মৃত্যুদিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে নানা আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হবে বেগম রোকেয়াকে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রোকেয়া দিবস উদযাপন ও বেগম রোকেয়া পদক-২০১৯ প্রদান করা হবে আজ। এবার পদক পাচ্ছেন পাঁচ বিশিষ্ট নারী। দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও স্বনির্ভরতা অর্জনে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীমুক্তি, সমাজসংস্কার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের পথিকৃৎ। তিনি উন্নত মানসিকতা, দূরদর্শী চিন্তা, যুক্তিপূর্ণ মতামত প্রদান ও বিশ্নেষণ, উদার মানবতাবোধের অবতারণা এবং সর্বোপরি দৃঢ় মনোবল দিয়ে তৎকালীন নারী সমাজকে জাগিয়ে তোলেন। রোকেয়ার জীবনাদর্শ ও কর্ম নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।’
দিবসটি উপলক্ষে বেগম রোকেয়ার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং সব শ্রেণি-পেশার নারীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বেগম রোকেয়ার কর্মে ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন। নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।’
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বেগম রোকেয়ার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে- মতিচূর (প্রবন্ধ), ২ খ-: ১ম খ- ১৯০৪, ২য় খ- ১৯২২), sultana’s dream (নকশাধর্মী রচনা, ১৯০৮), পদ্মরাগ (উপন্যাস, ১৯২৪), অবরোধবাসিনী (নকশাধর্মী গদ্যগ্রন্থ, ১৯৩১) ইত্যাদি। এ ছাড়া আছে অসংখ্য প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, ব্যঙ্গাত্মক রচনা ও অনুবাদ।
রোকেয়া পদক পাচ্ছেন পাঁচ নারী: এ বছর ‘বেগম রোকেয়া পদক’ এর জন্য পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে চূড়ান্ত করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নারীশিক্ষা, অধিকার, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে এ বছর পদক পাচ্ছেন সেলিনা খালেক। নারীশিক্ষায় অধ্যক্ষ শামসুন্নাহার, নারীর অধিকার, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য পদক পাচ্ছেন ড. নুরুন্নাহার ফয়জুন্নেসা (মরণোত্তর)। এ ছাড়া পাপড়ি বসু নারীর অধিকার ও বেগম আখতার জাহান নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য পদক পাচ্ছেন। পদকপ্রাপ্তরা বা তার পরিবারের প্রতিনিধিরা আজ সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০১৯’ গ্রহণ করবেন।
Please follow and like us: