শেখ গফ্ফার রহমান, একাত্তর নিউজ ২৪ ডেক্সঃ
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস রক্তসাগর পেরিয়ে গোটা জাতি যখন স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদয়ের পথে দাড়িয়ে, ঠিক সেই সময়ই রাতের আধারে পরাজয়ের গ্লানিমাখা পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করে।
বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে এই দিনে দেশকে মেধাশূন্য করার পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির সেরা শিক্ষক, সাংবাদিক,ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ দেশের বরেণ্য কৃতী সন্তানদের।
মুক্তিযুদ্ধকালে পুরো সময়জুড়েই পাকিস্তান হানাদার ও বদরবাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা।
দেশকে মেধাশূন্য করে দিতে পরিকল্পিতভাবে তালিকা করে চালানো হয়েছিল এই হত্যাযজ্ঞ।
মুক্তিযুদ্ধে যোগদান, মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা এবং স্বাধীন সার্বভৌম দেশের কথা বলতে গিয়ে প্রাণ দিতে
হয়েছিল এসব সূর্যসন্তানদের যাদের বাণী ধারণ করে
এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুজে পাওয়া যায়।
কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধের ৪৯ বছর পর কোথায় আজকের
বুদ্ধিজীবী সমাজ?
রাষ্ট্রের যে-কোন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে কার বাণী কানে বাজবে তরুণদের? বর্তমান সময়ের বুদ্ধিজীবী ও তরুণদের প্রতিনিধিদের কেউ কেউ বলছেন, আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় ধরে সুকৌশলে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার কারণে নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা মানুষ অবশিষ্ট থাকেননি।
দলীয় লেজুরবৃত্তির প্রবণতা এবং কিছু সুবিধা পাওয়ার আশায় এমন এক প্রজন্ম দাড় হয়েছে যাদের কাছে আমরা সেই স্বাধীন চিন্তা পাই না। বুদ্ধিজীবী সবসময়ই বিদ্যমান ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে বদল ঘটাতে চায়।
যখন যারা ক্ষমতাশালী তাদের সাথে থাকলে সুবিধা পাওয়া যায় বটে, তাকে কোনোভাবেই বুদ্ধিজীবী বলা যায় না।
যখন যে সরকার আসবেন তাদের অনুসারী কিছু
বিজ্ঞজনকে বুদ্ধিজীবী বলা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা বিদ্যমান ব্যবস্থাকে চ্যলেঞ্জ করতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের আপনি বিদ্বান বলতে পারেন, তারা বুদ্ধিজীবী নন, বুদ্ধিজীবীর দায় থাকে, সমাজের মানুষের প্রতি।
১৯৭১ সালে যারা শহীদ হয়েছেন তারা সামরিক এবং স্বৈরচারের শাসন চালিত রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেননি।
বর্ত্যমান সময়ে যে যাকে পছন্দ করে সেই তার কাছে বুদ্ধিজীবী।
আমরা বাণী শুনতে চাই তাদেরই যে ব্যক্তিকে সকলে পছন্দ করে। কিন্তু তার ওপর নির্ভর করে তো বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা হয় না। কিন্তু এখন এটিই কোনও দলীয় বুদ্ধিজীবীর রেওয়াজ দাড়িয়ে গেছে।
কোনদিনই একজন বুদ্ধিজীবী সবার কাছে গ্রহণযোগ্য
হননি, এটি সম্ভব না। যার যার আদর্শের লোক তাকে বেছে নেবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু তারপর কিছু কিছু বিষয়ে দলের বাইরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়, বুদ্ধিজীবীকে সেই ডিলেমাটা কাটাতে পারতে হবে বলে আমরা মনে করি।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার মাধ্যমে যে অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, পরবর্তীতে হয়তো শারিরীকভাবে এতো বুদ্ধিজীবী একসঙ্গে হত্যা করা হয়নি।
জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে স্তূপ করে লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল ঢাকার কয়েকটি এলাকায়।
তাদের হত্যা করেই ক্ষান্ত দেয়নি দখলদার পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস।
তাদের মৃতদেহকে বিকৃত করে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক দুইদিন আগে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
এরপর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
আমরা পাই ৩০ লক্ষাধিক শহীদ এবং ২ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভমের বিনিয়ে আমাদের লাল-সবুজের পাতাকা। আজ বিজয়ের মাসে বিনম্র শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি শহীদের।