শেখ গফ্ফার রহমান, স্টাফ রিপোর্টারঃ
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অনুযোগ নেই। আমরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশবাসীকে নিয়ে সব সমস্যা মোকাবিলা করে যাচ্ছি।
বক্তব্যে আবেগাপ্লুত দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি সেতু নির্মাণে সাহস জোগানো বাংলাদেশের জনগণকে স্যালুট জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা আবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, ‘জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা মাথা নোয়াইনি, আমরা মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা আমাদের মাথা নোয়াতে শিখান নাই।’
এটি শুধু কংক্রিটের সেতু নয়, সম্মান আর সক্ষমতার প্রতীক: প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে আর কিছুক্ষণ পরেই। বহু কাঙ্ক্ষিত সেই সেতুর উদ্বোধন করতে সেতুর মাওয়া প্রান্তে আগেই পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি দেশবাসীকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন তিনি। তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণে জড়িতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে সেতু নির্মাণে বেগ পেতে হয়েছে। তবে থেমে যায়নি। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নি।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের গল্প তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি শুধু ইট, রড, সিমেন্ট ও কংক্রিটের সেতু নয়, বাংলাদেশের সম্মান আর সক্ষমতার প্রতীক। এই সেতু নির্মাণ ঠেকাতে ষড়যন্ত্র হলো।’
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। টাকা ছাড় না হতেই দুর্নীতির কথা বলা হলো। মামলা হলো। সব কিছু পেরিয়ে আমরা আজ এ সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছি।
পদ্মা সেতু তৈরিতে যারা বাধা দিয়েছেন, তারা উপযুক্ত জবাব পেয়েছেন: প্রধানমন্ত্রীঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর জাজিরার নাওডোবা প্রান্তে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু তৈরিতে যারা বাধা দিয়েছেন, তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে। এ সেতুর ফলে ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে।
আবদুল আলীমের গানে প্রধানমন্ত্রীকে বরণঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত ও জাজিরার নাওডোবা প্রান্তের উদ্বোধন কার্যক্রম শেষে কাঠালবাড়ির জনসভাস্থলে পৌছান। এরপর মঞ্চে বাজানো হয় বাংলাদেশের লোকগানের উজ্জ্বল নক্ষত্র শিল্পী আবদুল আলীমের ‘সর্বনাশা পদ্মা নদীরে’ গানটি। এর পর বাজানো হয় ‘ও নদীরে একটি কথা সুধাই শুধু তোমারে’ গানটি। এরপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জয়বাংলা স্লোগানে জনসভাস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে।
মাওয়া প্রান্তে টোল দিলেন প্রধানমন্ত্রীঃ
শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন। এর আগে ১১টা ৪৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে টোল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও অতিথিদের গাড়ি সেতু পাড়ি দেয়। আগামীকাল রোববার ভোর থেকে টোল দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচল শুরু করবে সেতু দিয়ে।
মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন পদ্মা সেতু অতিক্রম করেন তখন বিমান বাহীনির ছয়টি হেলিকপ্টার তাকে অভিবাদন জানায়। এর পর ওই হেলিকপ্টারগুলো কাঠালবাড়ি ঘাটে জনসভা মঞ্চের ওপর দিয়ে চক্কর দেয়। এর একটিতে জাতীয় পতাকা, একটিতে বঙ্গবন্ধু, একটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পদ্মা সেতু, আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা বহন করছিল। আরেকটি হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছিটিয়ে জনসভায় আসা মানুষদের অভিবাদন জানানো হচ্ছিল।
প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে সেতুতে পার হলেন শেখ হাসিনাঃ
প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সেতুর মাওয়া প্রান্তের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শেষে টোল প্লাজায় যান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখানে তিনি নিজ হাতে টোল প্রদান শেষে গাড়ি বহর নিয়ে সেতু দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছিলেন।
সেতুতে নামলেন প্রধানমন্ত্রী, এরপর পাড়ি দিলেন সেতু
দুপুর ১২টার দিকে মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেন।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। জাজিরার দিকে যাওয়ার পথে দুপুর ১২টা ১২ মিনিটের দিকে গাড়ি থামিয়ে নেমে যান প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতুতে দাঁড়িয়ে তিনি বিমান বাহিনীর মহড়া দেখেন। এরপর ১২ টা ২৬ মিনিটের দিকে তিনি আবার গাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে তিনি জাজিরা প্রান্তে পৌছান।
জাজিরা প্রান্তেও দুপুর ১২ টা ৩৮ মিনিটের দিকে ফলক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সেখানে মোনাজাত হয়।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মান কাজে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।