আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যশোর পৌরসভার নির্বাচন -71news24

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

শেখ গফফার রহমান, যশোর অফিস  : 

আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহু কাঙ্খিত যশোর পৌরসভার নির্বাচন। মেয়র পদে তিনজন এবং কাউন্সিলর পদে ৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। ইতিমধ্যেই বিএনপির প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। আজকের ভোট গ্রহণ করা হবে আগের সীমানায়। এবারের নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ১৫ হাজার পাঁচশ’ ৭১ জন। এবারই প্রথমবারের মতো যশোর পৌরসভায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সবগুলো ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনসহ অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে গেছে। শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।


আজকের নির্বাচনে এক লাখ ৪৬ হাজার পাঁচশ’ ৯২ জন ভোটারের ভোট প্রদান করার কথা। এরমধ্যে পুরুষ ৭২ হাজার ৫০ এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ৭৪ হাজার পাঁচশ’ ৪২ জন। পৌরসভার মোট ৫৫টি কেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  সর্বশেষ, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর যশোর পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ভোটার ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ২১ জন। তার মধ্যে পুরুষ ছিল ৬৫ হাজার নয়জন এবং ৬৬ হাজার ১২ জন ছিল মহিলা ভোটার।

রিটার্নিং অফিসারের দাবি, সবগুলো কেন্দ্রই ‘গুরুত্বপূর্ণ’। তিনি জানান, এখন আর কোনো কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয় না। সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বলে বিভাজন করা হয় বলে জানান তিনি।
নির্বাচনে চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫৫ কেন্দ্রের বিপরীতে দু’হাজার ফোর্স নিযুক্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রে গতকাল থেকেই অবস্থান নিয়েছেন প্রশিক্ষিত অস্ত্রধারী ফোর্স। মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম মঙ্গলবার বিকেল থেকেই নির্বাচনী এলাকা ও কেন্দ্রের আশপাশে টহল শুরু করেছে। আজকের নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ করতে বজায় কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও অন্যসব আইন শৃখংলা বাহিনী গোটা পৌর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
কোনো রকম বিশৃংখলা নয়, ভোটাররা বিনা বাধায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন।
তারিখ পরিবর্তনের কারণে থেমে থেমে চার সপ্তাহের প্রচার প্রচারণার পর আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যশোর পৌরসভার নির্বাচন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হায়দার গণি খান পলাশ নৌকা প্রতীক, বিএনপি প্রার্থী মারুফুল ইসলাম ধানের শীষ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরদার হাত পাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও দু’সপ্তা আগে বিএনপি প্রার্থী মারুফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সময়মত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় ব্যালট পেপারে তার মার্কা ও নাম থাকছে।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন এক নম্বর ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আহমেদ শাকিল গাজর, সাহিদুর রহমান রিপন পাঞ্জাবি ও জাকির হোসেন রাজিব উটপাখি। দু’নম্বর ওয়ার্ডে শেখ রাশেদ আব্বাস রাজ পানির বোতল, শেখ সালাউদ্দিন আহমেদ ডালিম, জাহিদুল ইসলাম উটপাখি, তপন কুমার ঘোষ টেবিল ল্যাম্প, অনুব্রত সাহা ব্রিজ এবং ওসমানুজ্জামান চৌধুরী গাজর প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিন নম্বর ওয়ার্ডে শেখ মোকছিমুল বারী অপু গাজর, উম্মে মাকসুদা মাসু টেবিল ল্যাম্প, ওমর ফারুক ডালিম, সাব্বির মালিক উটপাখি ও কামরুজ্জামান পাঞ্জাবি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চার নম্বর ওয়ার্ডে মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তা পানির বোতল, জাহিদ হোসেন মিলন টেবিল ল্যাম্প ও মঈন উদ্দিন মিটু উটপাখি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ওয়ার্ডে মঈন উদ্দিন মিঠু মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তিনিও সময়মত প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে তার প্রতীক থাকছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান চাকলাদার টেবিল ল্যাম্প, হাফিজুর রহমান উটপাখি, রাজিবুল আলম ব্লাকবোর্ড, মোকছেদুর রহমান ভুট্টো ব্রিজ, শরীফ আবদুল¬াহ আল মাসউদ ডালিম ও মিজানুর রহমান বাবলু পানির বোতল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগীর কবির সুমন পাঞ্জাবি, আজাহার হোসেন স্বপন টেবিল ল্যাম্প, আনিসুজ্জামান ব্রিজ, আশরাফুজ্জামান পানির বোতল ও আশরাফুল হাসান উটপাখি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সাত নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম মোস্তফা উটপাখি, শামসুদ্দিন বাবু পাঞ্জাবি, জুলফিকার আলী পানির বোতল, শাহেদ উর রহমান রনি টেবিল ল্যাম্প, শাহেদ হোসেন নয়ন ব্লাকবোর্ড, আবু শাহজালাল ডালিম, কামাল হোসেন ব্রিজ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আট নম্বর ওয়ার্ডে সন্তোষ দত্ত ব্রিজ, মনিরুজ্জামান মাসুম ডালিম, প্রদীপ কুমার নাথ বাবলু উটপাখি এবং ওবাইদুল ইসলাম রাকিব টেবিল ল্যাম্প প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আজিজুল ইসলাম ব্রিজ, শেখ নাসিম উদ্দীন পলাশ ডালিম, শেখ ফেরদৌস ওয়াহিদ টেবিল ল্যাম্প, শেখ শহীদ পাঞ্জাবি, খন্দকার মারুফ হোসাইন গাজর, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান পানির বোতল, স্বপন কুমার ধর উটপাখি ও আবু বক্কর সিদ্দিক ব্ল¬াকবোর্ড প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে এক নম্বর ওয়ার্ডে নয় জন প্রার্থীর মধ্যে আয়েশা ছিদ্দিকা আংটি, আইরিন পারভীন চশমা, সুফিয়া বেগম কলস, রেহেনা পারভীন হারমোনিয়াম, রুমা আক্তার অটোরিকশা, সান-ই-শাকিলা আফরোজ আনারস, অর্চনা অধিকারী দ্বিতল বাস, সেলিনা খাতুন জবা ফুল ও রোকেয়া বেগম পেয়েছেন টেলিফোন প্রতীক। দু’নম্বর ওয়ার্ডে নাসিমা আক্তার জলি আনারস ও নাছিমা সুলতানা চশমা প্রতীক পেয়েছেন। তিন নম্বর ওয়ার্ডে শেখ রোকেয়া পারভীন ডলি আনারস ও সালমা আক্তার রানি চশমা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
যশোর পৌরসভার আজকের নির্বাচনী মাঠে চূড়ান্ত নিরাপত্তায় জেলা বিশেষ শাখার সমন্বয়ে দায়িত বন্টন করা হয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে। বিশেষ শাখার ডিআইও ওয়ান এম মশিউর রহমান জানিয়েছেন, আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলা নির্বাচনী কার্যক্রম সুষ্ঠু ও অবাধ করার পরিবেশ তৈরি করতে মঙ্গলবার থেকে জেলা পুলিশের এক হাজার দুশ’ সদস্য, চারশ’ ৫৫ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি কেন্দ্রে জেলা বিশেষ শাখার একজন সদস্য, একজন করে ইন্সপেক্টর, একজন সাব ইন্সপেক্টর, ১৬ জন কনস্টেবল এবং নয়জন করে আনসার সদস্য কাজ করছেন।

এছাড়া, নির্বাচনী এলাকায় প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং টিম, একটি করে মোবাইল টিম কাজ করছে। একজন এডিশনাল এসপির নেতৃত্বে দু’টি ওয়ার্ড মিলিয়ে একটি শক্তিশালী টিম রাখা হয়েছে আইনশৃংখলা তদারকিতে। সব মিলিয়ে যশোর পৌর নির্বাচনে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় রাখা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা সমুন্্নত রাখতে ও অনাকাঙ্খিত সংঘাত এড়াতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার আরও কয়েকটি ইউনিটের সদস্যরা টহলে রয়েছেন। আজ নির্বাচনের দিন ও পরের দিন কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকবে গোটা যশোর।
এ ব্যাপারে যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার জানিয়েছেন, নির্বাচনী এলাকা ও কেন্দ্রে পুলিশ সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক বলয় তৈরি করেছে। এ কাজে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কৌশল নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। যশোর পুলিশের কোনো সদস্য নির্বাচনী দায়িত্বের বাইরে থাকছেন না। তাদের লক্ষ্য একটাই, যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তারপরও যদি এ কাজে কোনো ব্যতয় ঘটে বা কেউ শান্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টির চেষ্টা চালায় তবে পুলিশ প্রশাসন কাউকে ছাড় দেবে না। তাৎক্ষণিক একশানে যাবে পুলিশ।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে জেলা প্রশাসন জিরো টলারেন্স ভূমিকায় থাকবে। কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় কিংবা কোনো নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আইনের পথে অবিচল থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যেখানে অনিয়ম পরিলক্ষিত হবে, সেখানেই তৎক্ষণাৎ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন জেলা নির্বাচন অফিসার হুমায়ুর কবীর। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে।

Please follow and like us: