শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বেনাপোল : বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ রোধে বিশ্ববাসীর ন্যায় গৃহবন্দী আজ বাংলাদেশের মানুষ। আর এই বৈশ্বিক মহামারীতে সবচেয়ে দূর্ভোগে পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া দিনমজুর ও মধ্যবৃত্ত শ্রেণির মানুষ। একদিকে যেমন তাদের কোন কর্ম নাই। তেমনি অপরদিকে, গোদের উপর বিশ ফোঁড়ার মতো অবস্থা তাদের। বিদ্যুৎ বিল সহ নানা সমস্যা এখন তাদের গলার কাটা হিসাবে দেখা দিয়েছে। করোনায় সব কিছু থমকে গেলেও, থেমে নেই পল্লী বিদ্যুৎ বিল কপি বিতরণ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা বিদ্যুৎ বিল বিলি করে বেড়াচ্ছেন।
আর সেই বিদ্যুৎ বিল কপিতে লেখা আছে, আপনার অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আপনার গত বছরের একই সময়/একই মাসের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে গড় বিল প্রণয়ন করা হলো। কোন অসঙ্গতি থাকলে পরবর্তীতে তা সংশোধন/সমন্বয় করা হবে।
বিদ্যুৎ আসার কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রাহকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে, আপনার বিদ্যুৎ বিল রকেট, জিপি, রবিতে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করুন-যশোর প্রবিস-১।
আর তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সাধারণ গ্রাহকরা। এ নিয়ে উত্তাল স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুক। তারা বিদ্যুৎ বিলের কপির ছবি ও বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছে ফেসবুকে। আর তাতে অভিযোগ করে লিখছেন, এমন দূর্যোগ ক্রান্তিলগ্নে আমরা যেখানে সরকারি আদেশ মেনে, নিজেদের কাজ-কর্ম ফেলে ঘরবন্দী। সেখানে যশোর পল্লী বিদুৎ-১ এর কার্যক্রম খুবই বেদনাদায়ক। তারা ইচ্ছামত অফিসে বসে মনগড়া বিল করছে দাবি গ্রাহকদের।
বেনাপোল নামাজগ্রামের বাসিন্দা ফারুক এ কেমন বিচার সম্বলিত ২০২০ ও ২০১৯ সালের দুটি বিদ্যুৎ বিলের ছবি পোস্ট করে তাতে লেখেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের, ডিজিটাল চোর। পল্লী বিদ্যুৎ বিল দেখার খবর নেই, আবার বিদ্যুৎ বিল প্রস্তত করে, বাড়ি দিয়ে যাচ্ছে। লিখেছে গত বছরের এই মাসের বিলের সাথে গড় করে বিল প্রস্তুত করেছে। আমার গত বছর এই মাসের বিল ছিল ৬৬৭ টাকা। তাহলে এবছর কি করে ১২২৪ টাকা হয়? সব ডাকাতি করছে এই করোনা ভাইরাসের অজুহাতে।
ফরহাদ নামে এক গ্রাহক পোস্ট করেছেন, আমার যে মিটারে এত দিন বিল আসতো ৫০০ টাকা, ৩০০ টাকা, ১৯৭ টাকা, ২২০ টাকা। সেই মিটারে বিল আসছে ১৫০০ টাকা।
আমার বাড়ির চারটা মিটার। সব ভাড়াটিয়া, এত বিল দেখে তো মাথায় হাত।
নয়ন কাজল নামে এক গ্রাহক লিখেছেন, আমার বিদ্যুৎ বিল ২ হাজার টাকার উপরে। করোনার কারণে ২০ দিনের উপরে আমি বাপের বাড়ি ছিলাম। বিল দেখে আমারও মাথা ঘুরিয়ে গেছে।
বেনাপোল ভবেরবেড় গ্রামের বাসিন্দা আওয়াল হোসেন বিদ্যুৎ বিলের ছবি দিয়ে লেখেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কতৃক প্রাপ্ত বিদ্যুৎ বিলের কপি।
সরকার মার্চ, এপ্রিল ও মে ৩ মাসের বিল পরিশোধে শিথিলতা প্রদান করেছেন ।
সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কেন ঘর থেকে বের হয়ে, গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিল পৌঁছে দিচ্ছেন, তাহা আমার বোধগম্য নয়।
নিরাপত্তার কারণে এটা বলতেই পারি যে, কর্মকর্তা বাড়ি এসে বিল টি দিয়ে গেল। তিনি কি কোভিড-১৯ নেগেটিভ না পজিটিভ তা কি বিদ্যুৎ বিভাগ জানেন?
না আপনি, আপনারা নিশ্চিত নয়। কারন ঐ ব্যক্তি শার্শা উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভাগে চাকুরী করে বলে দূর্দান্ত প্রতাপে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছেন ।
কে জানে, কি আছে তার দেহে। তবে তার কোন পিপিই যোগান নিশ্চিত ছিলো না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত বছর (২০১৯) সালে এপ্রিল মাসে তার বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ৮০০ টাকা। কিন্তু এ বছরে সেই বিল এসেছে ১২৮৪ টাকা।
মুরাদ হোসেন নামে সাদিপুর গ্রামের এক বাসিন্দা পোস্ট করেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যতদিন করোনা ভাইরাস মুক্ত না হয়, আর লকডাউন শেষ না হয়। ততদিন পর্যন্ত আবাসিক বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করে দেওয়া হোক।
বেনাপোল নামাজগ্রামের জয়নাল আবেদিন অভিযোগ করে বলেন, সরকারি আদেশ অমান্য করে
বিদ্যুৎ বিলের জরিমানা নিচ্ছে ব্যাংক।
এবিষয়ে জানতে বেনাপোল পল্লী বিদ্যুৎ শাখায় ফোন করলে বোরহান নামে (লাইনম্যান) জানান, সরকার ঘোষিত ৩ মাস সময়ের আবাসিক বিদ্যুৎ বিল গ্রাহক চাইলে অনলাইনে অথবা ব্যাংক খুললে ব্যাংকে গিয়ে পরিশোধ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোন জরিমানা দেওয়া লাগবে না। কিন্তু বানিজ্যিক মিটার ব্যবহারকারীদের জরিমানা সহ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ এর গড় বিল নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে।