শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বেনাপোল : ভারতে পাঁচার হয়ে যাওয়া ৩০ কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে স্বদেশে ফিরে এসেছে। শুক্রবার বিকেলে তাদেরকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এরা, বিভিন্ন সময়ে পাচারকারিদের অপকৌশলে ভারতে পাচার হয়ে যায়। পরে সেখানে পুলিশের হাতে আটক হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা খেটে দু’দেশ সরকারের দেওয়া বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরে।
স্বদেশে বাবা-মায়ের কাছে ফেরত আসারা হলো- নওগা জেলার কাথাপুকুর গ্রামের জহির আলীর ছেলে শহিদ(১৪), চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার গাইপাড়া গ্রামের নাইমুল হক’র ছেলে মিলন(১৪), পিরোজপুর জেলার লক্ষনা নতুনপাড়ার শাহিন তালুকদার এর ছেলে সাব্বির তালুকদার(১২), চট্রগ্রাম জেলার খানদোলার বাজার এলাকার মুজিব শেখ’র ছেলে ইব্রাহীম শেখ(১৪), ঠাকুরগাঁও জেলার বস্তপুর গ্রামের শুনিল রায়’র ছেলে বিপ্লব রায়(১৪), পাবনা জেলার বনগা বাড়ী গ্রামের তাহের আলীর মেয়ে মাহফুজা খাতুন(১৫), সাতক্ষীরা জেলার চম্পাপুর গ্রামের বাবুল সরদার’র মেয়ে চুমকি খাতুন (১৪), রাজশাহী জেলার গোপীনাথপুর গ্রামের আবুল কালম এর মেয়ে লাবনী আক্তার(১৬), গোপালগঞ্জ জেলার খোলাথিয়া গ্রামের মুজিবর সিকদার’র মেয়ে শাপলা সিকদার(১৬), খুলনা জেলার উত্তর মোকামপুর গ্রামের অহিদুল’র মেয়ে নীলা খাতুন(১২), চট্রগ্রাম জেলার হালিশহর এলাকার রশিদ হাওলাদার’র মেয়ে উম্মে কুলসুম(১৩), খুনার জেলার তেরখাদা গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে জুমিনি আক্তার (১৬), খুলনা জেলার পারহাজি গ্রামের মুক্তার শেখ’র মেয়ে সায়রা খাতুন(১৯), জয়পুরহাট জেলার ভিমপুর গ্রামের কালু শেখ এর মেয়ে কাকলী(১৬), মাগুরা জেলার খাসিয়ারা গ্রামের ইলিয়াছ’র মেয়ে আরুফা খাতুন(৩৫) ও একই এলাকার কালামিয়া মুন্সীর মেয়ে দিলারা(২২), আব্দুস সালমের মেয়ে জান্নাত আরা(৭), রিয়া আক্তার (১৪), সেলিম মিয়ার মেয়ে সাদিয়া আক্তার(১৬), মিনারা আক্তার(১৮), সালামের মেয়ে রুখসানা আক্তার(৫), ছেলে মোঃ সামি(৩), ঢাকা জেলার নাখালপাড়া এলাকার মমিন হোসেনের মেয়ে মুক্তা আক্তার(১৭), বাগেরহাট জেলার পাথামারা গ্রামের আসলাম খানের মেয়ে তামান্না আক্তার খুসবু(১৭), বাগেরহাট জেলার মাদারপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের মেয়ে হুমাইরা খাতুন(১২), দিনাজপুর জেলার মধ্য বাসুদেবপুর গ্রামের শফি আহমেদের ছেলে আমেদ আলী(১৪), নারানগঞ্জ জেলার খাগানদা গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে নুরইসলাম(১৩), খুলনা জেলার তিপনা গ্রামের রবিন অধিকারীর ছেলে আকাশ অধিকারী(১৩) ও চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার মল্লিকপুর গ্রামের প্রতাপ ঘোষের ছেলে প্রকাশ ঘোষ(১৬)।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কথা হয় যশোর রাইটস’র পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের সাথে। তিনি বলেন, ফেরত আসাদের আমরা ও মহিলা আইনজীবি সমিতিসহ কয়েকটি এনজিও গ্রহন করছি। এরা খুব ছোট বেলায় পাচারকারি চক্রের মাধ্যমে পাঁচার হয়ে যায়। এখন এরা অনেক বড় হয়েগেছে। তাই, এদেরকে এদের বাবা-মা, বা এরাও তাদের বাবা-মা-ভাই-বোনদের চিনতে পারবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য আবার যাতে কোন পাচারকারি আমাদের কাছ থেকে এদেরকে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য প্রাথমিকভাবে যশোরে নিয়ে যাবো। পরে তাদের পরিবারের সঠিক সদস্য জেনে এদেরকে স্ব-স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব।
কথা হয় বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর রেখা রানীর সাথে। তিনি বলেন, এরা বিভিন্ন সময়ে পাচারকারিদের অপকৌশলের শিকার হয়ে ঠাই হয় ভারতে। পরে সেখানে পুলিশের কাছে আটক হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটে। সেখান থেকে সেদেশের বেসরকারী এনজিও সংস্থা তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে শেল্টার হোমে রাখে। অবশেষে দু’দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে এরা বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে স্বদেশে ফেরত আসে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আহসান কবির বলেন, ফেরত আসাদের বেনাপোল পোর্ট থানার কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে তাদের আরো কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।
এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন খান বলেন, ফেরত আসারা দীর্ঘদিন যাবত ভারতের জেল খানায় সাজা খাটে। পরে দু’দেশের এনজিও সংস্থা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাদেরকে স্বদেশে ফেরার অনুমতি নেয়। অবশেষে শুক্রবার বিকেলে তারা বেনাপোল ইমিগ্রেশনে আসলে ইমিগ্রেশন পুলিশ থানায় জানায়। পরে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখান থেকে তাদেরকে কয়েকটি এনজিও সংস্থা গ্রহণ করে স্ব-স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য।