শেখ গফফার রহমান, একাত্তর নিউজ২৪ যশোর অফিস :
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের ৯৪ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সদ্য অনুমোদন দেওয়া কমিটির উপদেষ্টা সদস্য পদে একজন মৃত ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। গত ৩০ জুলাই অনুমোদিত কমিটির উপদেষ্টা গোলাম রসুল শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালের ২৬জুলাই ইন্তেকাল করেন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে মৃত ব্যক্তি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সন্তান, স্ত্রীসহ অন্তত ১১ জন স্থান পেয়েছেন। উত্তারাধিকারের রাজনীতিতে গুরুত্ব ও মৃত নেতার নাম তালিকায় থাকায় বিভিন্ন মহলে আলোচনা, সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বলছেন, জেলা পর্যায়ের নেতারা তৃণমূলের খবর রাখেন না। তাই কমিটিতে মৃত নেতার নাম এসেছে।
আর জেলার নেতারা বলছেন, সংশোধনী ম্যাসেজ কেন্দ্রে না পৌঁছানোয় এমন ভুল হয়েছে। দলের হাইকমান্ড উত্তারাধিকারের রাজনীতিতে গুরুত্ব দেওয়ায় আদি আওয়ামী লীগ পরিবারের নতুন প্রজন্ম সামনে আসার সুযোগ পেয়েছে।
জানা গেছে, ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের ২০ মাস পর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের ৯৪ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৯ জন উপদেষ্টাসহ ৯৪ সদস্যের এই কমিটি অনুমোদন দেন। এর আগে ২০১৯ সালে ২৭ নভেম্বর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে শহীদুল ইসলাম মিলনকে সভাপতি ও শাহীন চাকলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ২২ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তরুণ ও সাবেক ছাত্রনেতা জায়গা করে নিলেও বাদ পড়েছেন বিগত কমিটির কেউ কেউ। তবে সভাপতি শহীদুল ইসলাম, তার ছেলে, ভায়রা ও শ্যালক কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।
কমিটির সদস্যরা হলেন- সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ, হায়দার গণি খান পলাশ, সাইফুজ্জামান পিকুল, আবদুল খালেক, মুক্তিযোদ্ধা একে এম খয়রত হোসেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী রায়হান, গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট জহুর আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট এবিএম আহসানুল হক, মেহেদী হাসান মিন্টু, এস এম হুময়ন কবির কবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, আশরাফুল আলম লিটন, মীর জহুরুল হক, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী আব্দুল কাদের, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু সেলিম রানা, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ফারুক আহমেদ কচি, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুখেন মজুমদার, দফতর সম্পাদক মজিবুদ্দৌলা কনক, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুন্সী মহিউদ্দিন, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাইফুদ্দিন সাইফ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেতারা খাতুন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর হাসান হ্যাপী, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক এ এস এম আশিফুদ্দৌলা, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শেখ আতিকুর বাবু, শ্রম সম্পাদক কাজী আবদুস সবুর হেলাল, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক কাজী উত্তম বর্ণ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. এম এ বাসার, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আফজাল হোসেন, মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, উপ দফতর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লুৎফুল কবীর বিজু ও কোষাধ্যক্ষ মঈনুল আলম টুলু।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা হলেন- অ্যাডভোকেট মঈনুদ্দিন মিয়াজি, নজরুল ইসলাম ঝর্ণা, অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, মাস্টার রুহুল আমিন, গোলাম মোস্তফা খোকন, জাহাঙ্গীর আলম মুকুল, সৈয়দ ওসমান মঞ্জুর জানু, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, এস এম কামরুজ্জামান চুন্নু, গোলাম রসুল, প্রণব ধর, জয়নাল আবেদীন, নওশের আলী, মিজানুর রহমান মৃধা, অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন খান, আব্দুল মান্নান মিনু, মোবাশ্বের হোসেন বাবু, আহসান উল্লাহ মাস্টার ও সোলায়মান হোসেন।
সদস্যরা হলেন- স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, শেখ আফিল উদ্দিন এমপি, রণজিত কুমার রায়, মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন এমপি, মোহিত কুমার নাথ, আলেয়া আফরোজ, ফিরোজা রেজা আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ খাইরুজ্জামান রয়েল, এনামুল হক বাবুল, কৃষিবিদ আব্দুস সালাম, ফারুক হোসেন, সরদার অলিয়ার রহমান, মেহেদী মাসুদ চৌধুরী, শওকত আলী, আসাদুজ্জামান মিঠু,
আসাদুজ্জামান আসাদ, মীর আরশাদ আলী রায়হান, মোস্তফা আশিষ দেবু, প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন দিপু, কামাল হোসেন, অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন, রফিকুল ইসলাম মোড়ল, মসিউর রহমান সাগর, অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম তুহিন, ইঞ্জিনিয়ার আরশাদ পারভেজ, এহসানুল রহমান লিটু, গোলাম মোস্তাফা, সামির ইসলাম পিয়াস, আলমুন ইসলাম পিপুল, অমিত কুমার বসু, নাজমা খানম, ভিক্টোরিয়া পারভিন সাথী, হুমায়ন সুলতান ও মারুফ হোসেন খোকন।
গত কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর রোকেয়া পারভীন ডলি, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কাজী রফিক ও দফতর সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপু নতুন কমিটিতে স্থান পাননি। তবে সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলনের ছেলে সামির ইসলাম পিয়াস সদস্য হয়েছেন। ভায়রা ভাই শেখ আতিকুর বাবু শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং শ্যালক হুমায়ুন কবির কবু হয়েছেন সহসভাপতি। এরমধ্যে শ্যালক আগের কমিটিতে থাকলেও নতুন যুক্ত হয়েছেন ছেলে ও ভায়রা।
নতুন কমিটিতে এমন বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা যশোরের রাজনীতিতে অচেনা। তাদের মধ্যে রয়েছেন বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাঈফুদ্দিন সাইফ, প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন দিপু, অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন, আলমুন ইসলাম পিপুল ও অমিত কুমার বসু। যশোরের ছেলে অমিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে এখন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ব্যক্তিগত সহকারী। তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রয়েছেন। যদিও যশোরের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা তাকে চেনেন না। প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন দিপু ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন, বসবাসও সেখানে। এ রকম আরও কয়েকজনের সঙ্গে নেই জেলার রাজনীতির কোনো সম্পর্ক। এছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পাওয়া গোলাম রসুল মারা গেছেন চার বছর আগেই।
শার্শার গোগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, গোলাম রসুল অসুস্থ হয়ে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই মারা যান। জেলার নেতারা যে তৃণমূলের নেতাদের খবর রাখেন না তার জ্বলন্ত প্রমাণ জেলা কমিটিতে চার বছর আগের মৃত নেতার নাম সংযোজন। এটা দুঃখজনক। এই হলো দলের অবস্থা।
এ বিষয়ে গোলাম রসুলের ছেলে গোগা ইউনাইটেড আদর্শ কলেজের প্রভাষক ওমর ফারুক বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাবার মৃত্যুর চার বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে কীভাবে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ পেয়েছেন বিষয়টি জানা নেই। কীভাবে এ রকম হলো তা আমরা নিজেরাও জানি না।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন বলেন, ছয় মাস আগে প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছিল। চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় মৃত গোলাম রসুলের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সংশোধনী দিয়ে আমরা জেলা কমিটি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। চিঠি হয়তো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পৌঁছায়নি।
তিনি আরও বলেন, নতুন কমিটি করলে কিছু বাদ পড়বে, কিছু নতুন ঢুকবে এটাই স্বাভাবিক। আর আমার পরিবারের যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছে তারা আগে থেকেই রাজনীতি করত। সবমিলিয়ে কমিটি ভালো হয়েছে।