রিফাত আরেফিন:
মর্জিনার সাথে ২৪ বছরের পরকীয়া সম্পর্ক। অনেক টাকা পয়সা খেয়েছে। হঠাৎ সে জহিরুলের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হয়। তা নিয়েও দুঃখ ছিল না, ও যদি আমার সাথে কথা-বার্তা বলতো। কথা-বার্তা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে জাউরা মাউরা বলে গালি দেয়। ভ্যান কেড়ে নিয়েছে ও মোবাইল ফোন ভাংচুর করেছে। হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয়। মা-বউ ও মেয়ের সামনে এভাবে অপমান করার রাগে আমি কুড়াল দিয়ে হত্যা করেছি ওর নতুন পরকীয়া প্রেমিক ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামকে। রাগে পড়ে করে ফেলেছি, আর এরকম ভুল হবে না। আমারে সবাই ক্ষমা করে দেন।
যশোর ডিবি পুলিশের জালে গ্রেফতার পঞ্চাশোর্ধ বয়সের শফিকুল এভাবেই সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। জহিরুল ইসলামকে হত্যায় সহযোগীতা করে ধরা পড়েছেন মামুন নামে আরেক যুবক। ত্রিভুজ পরকীয়া প্রেমে জড়িত থাকার অভিযোগে মর্জিনাকেও থানা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে।
যশোরের মনিরামপুরের বাটবিলা পাকা রাস্তা বিলের পাশে ১১ ডিসেম্বর পড়েছিল মুখমন্ডল ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পাইপ ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলালের (৫১) লাশ। তিনি গোবিন্দপুরের খোরশেদ সানার ছেলে। পার্শ্ববতী কোনাকোলা বাজারে তার ছিল টিউবওয়েলের পাইপের ব্যবসা। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। লাশের পাশে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পড়েছিল। যেকারণে এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না।
এই মৃত্যুটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হত্যা না দুর্ঘটনা-তা নিয়ে রীতিমত ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেরই ধারণা জম্মেছিল এটি দুর্ঘটনা না, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছিলেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা হলে শুধুমাত্র মাথা-মুখমন্ডল বিভ্যৎস হওয়ার কথা না। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হতো। এই সন্দেহ থেকে নিহতের স্ত্রী সাইফুর নাহার মনিরামপুর থানায় মামলা করেন। যার নাম্বার ১০। ধোঁয়াশা সৃষ্টির কারণে পুলিশ হত্যাকান্ডটিকে চাঞ্চল্যকর হিসেবে বিবেচনা করে তদেন্তে মাঠে নেমে পড়ে।
জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্তে নামে এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লু বের করার চেষ্টা করে। সোর্স ব্যবহার করে নিশ্চিত হয় এটি হত্যাকাণ্ড। যারপ্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মনিরাপুরের শ্যামনগর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে ডিবি। এসময় ঘটনায় জড়িত ২ সদস্যকে আটক করাসহ হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো কুড়াল, মোটরসাইকেল ও আসামিদের ব্যবহৃত ২টি মোবাইল উদ্ধার করে। আটককৃতরা হচ্ছে শ্যামনগররের হাবিবুর মোল্লার ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৩) ও একই গ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে মামুন হোসেন (৩২)।
হত্যাকাণ্ডের সরল স্বীকারোক্তি দেয়া শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে জানান-শ্যামনগর গ্রামের জলিল মোড়লের স্ত্রী মর্জিনা বেগমের (৩৩) সাথে তার ২৪ বছর ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। গত বছর ৪ আগে জহিরুলের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয় মর্জিনা বেগম। জহিরুলের সাথে পরকীয়া প্রেম নিয়েও শফিকুলের দুঃখ ছিল না। তার ক্ষোভ মর্জিনা কথা বন্ধ করে দেয়। তার কাছে আকুতি করে শফিকুল বলে, ‘তুই যার সাথে সম্পর্ক করেছিস, কর কিন্তু আমার সাথে কথা-বার্তা বন্ধ করিসনে।’ কিন্তু মর্জিনা শফিকুলের স্ত্রী-মেয়েসহ পরিবারের সামনে অপমান করে। ভ্যান ও মোবাইল ভেঙে দেয় এবং হত্যার হুমকি দেয়। এই ক্ষোভ থেকে শফিকুল তার প্রতিপক্ষ মর্জিনার নতুন প্রেমিক জহিরুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। শফিকুল আরও জানান-কুড়াল দিয়ে হত্যায় সহযোগীতা করেছিল মামুন। ডিবি পুলিশ মামুনকেও গ্রেফতার করেছে।
শফিকুলের দাবি-ভুল হয়ে গেছে কিন্তু রাগ সামলাতে না পেরে পরিকল্পনা মোতাবেক ১০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে রাস্তায় কুড়াল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি ও মামুন। কোনাকোলা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে জহিরুলের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন তারা। জহিরুল দাঁড়িয়ে পড়া মাত্রই কুড়াল দিয়ে আঘাত শুরু করেন শফিকুল। মামুন সহযোগীতা করেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ছেড়ে যায় খুনিরা।