ছাত্রলীগের পর এখন যুবলীগকে ধরেছিঃপ্রধানমন্ত্রী

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

একাত্তর নিউজ ,ঢাকা অফিসঃ

বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা তাদের সাংগঠনিক অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

অনিয়মকারীদের কাউকে ছাড়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের পর এখন যুবলীগকে ধরেছি। সামাজিক যেসব অসঙ্গতি এগুলো দূর করতে হবে। মারামারি খুনাখুনি, এই যে ক্যাসিনো নিয়ে মারামারি খুনাখুনি হবে এগুলো টলারেট করব না।

তিনি বলেন, আমি কষ্ট করে সবকিছু করছি দেশের জন্য, দেশের উন্নয়ন করছি, এর ওপর কালিমা আসুক সেটা আমি কোনোভাবে হতে দেব না। আমি কাউকেই ছাড়ব না। যদি কেউ বাধা দেয় কাউকে ছাড়া হবে না।

ছাত্রলীগ নেতাদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছি। বিশ্বাস ও আস্থার মর্যাদা যদি রাখতে না পার তাহলে…।ক্ষমতা প্রদর্শনের রাজনীতি ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রনেতাদের বিনয়ী থাকতে হবে। যত উপরে উঠবে তত বিনয়ী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে চলতে হবে, প্রোটোকল নিয়ে চলতে হবে, ক্ষমতার সাথে চলতে হবে, এগুলো করা যাবে না। এগুলো করলে সাময়িকভাবে কিছু টাকা-পয়সা হবে কিন্তু হারিয়ে যাবে। সেটা হবে দুঃখজনক। এটা আমি তোমাদের কাছে চাই না।

শেখ হাসিনা বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পেলেই নিয়ে নিতে হবে এই ধারণা নিয়ে রাজনীতি করলে কিছু পাওয়া যায় না। যখন যেভাবে চলার সেই শিক্ষা নিয়ে চলতে হবে। সেই শিক্ষা বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলাম।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজের জীবনে ত্যাগস্বীকার করার কথা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কম্প্রোমাইজ করতে বলেছিল, তখন বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে নেই।

নিজের জীবনে রাজনৈতিক প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যত প্রতিকূল অবস্থা আমার জীবনে মোকাবিলা করতে হয়েছে, বাংলাদেশের আর কারও হয়নি। আমাকে অনেক অফার দেয়া হয়েছে। জীবনে কখনও কম্প্রোমাইজ করিনি।

ছাত্রলীগকে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে। সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে নিতে হবে। যাতে সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়।

তিনি বলেন, নীতি-আদর্শ, সততা, সংযম নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। যদি সেটা না করো, একটা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি না তাহলে ভবিষ্যতে কার কাছে দেশ রেখে যাব? তোমাদের কাজে মূল্যায়নের মধ্যে দিয়ে আসতে হবে, আগামী দিনের নেতৃত্বে। মানুষ তাহলে সাদরে গ্রহণ করবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি চাই, একটা আদর্শ নিয়ে চলো, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাও। ২০৪১ পর্যন্ত তোমরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্ররা লেখাপড়া করতে এখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) আসে। তাদের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

ছাত্রনেতাদের বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, বঙ্গবন্ধুর সিক্রেট ডকুমেন্ট পড়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখান থেকে ভালো রাজনৈতিক শিক্ষা পাওয়া যায়।

ছাত্রলীগের ইমেজ বাড়ে সেভাবে কাজ করতে সংগঠনের নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নিজেদের ভাবমূর্তি বাড়াতে হবে, দেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে হবে। মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় এ রকম কোনো কাজে যুক্ত থাকা যাবে না। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের মূল্য দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির ছাত্রসংগঠন ২০০১ এর পরে ক্ষমতায় এসে যা করেছে, বা এরও আগে যা করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সেই রকম আচারণ করা যাবে না।

তিনি বলেন, সত্যিকারের নীতি-আদর্শ রাজনীতি করলে সংগঠন একটা ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। তাহলে মানুষের আস্থা বিশ্বাস ছাত্রলীগের ওপর অনেক বাড়বে। এটা না করে যদি ওদের (বিএনপি) আচারণ করা হয় তাহলে আমাদের অবস্থাও তাদের মতো হবে। ছাত্রলীগের প্রতি যদি মানুষে আস্থা-বিশ্বাস না থাকে তাহলে বিএনপি, ছাত্রদল যা করে গেছে সেই একই ধরনের কাজ হবে।

কোনো কাজই যেন সরকারের সুনাম নষ্ট না করে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। ক্ষমতায় গেলে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হলে কষ্টার্জিত সফলতা, সরকার পরিচালনার সুনাম নষ্ট হবে। সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয় এমন কোনো কাজও করা যাবে না।

সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের শ্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খেটে দেশকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। যারা বলেছিল এদেশ বটমলেস বাস্কেট হবে, (আমেরিকার প্রতি ইঙ্গিত করে); পাকিস্তান বলেছিল বাংলাদেশ হবে বোঝা, গরিব-দুখী জাতি। আজকে তাদের ওখানে আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশ এমন হলো কেমনে, বাংলাদেশের এই সফলতা। আজকে তারাই স্বীকার করে বাংলাদেশ অর্জন করেছে, বাংলাদেশ রোল মডেল।

Please follow and like us: