Facebook যদি ‘বইয়ের মুখমুখি হও’ স্লোগানে আসত!!

নাজিম,বসুন্দিয়া,যশোর:
Face-মুখমুখি হও, book-বই। তাই Facebook অর্থ বইয়ের মুখমুখি হও।বেকার এবং ছাত্রদের কথা নাইবা বললাম,চাকুরীজীবি,ব্যাবসায়ী,দোকানদার,শিক্ষক,সরকারী কর্মচারী,নেতা সহ সকল পেশার মানুষের কাজের ফাকে বা কাজ ফেলে হাতে যখন ফেসবুক তখন আমাদের দৃষ্টিসীমার দুরত্ব আমাদের হাতের সমান।হাত দুইটি ভাজ করে রাখলে তার চেয়েও কম।অথচ মানুষকে নাকি দূর দৃষ্টি সম্পন্ন হতে হয়।দূর দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যাক্তিরাই জ্ঞানী,বুদ্ধিমান,উদার ও দক্ষ হয়।যেহেতু আমরা খাটো দৃষ্টি সম্পন্ন,আমার অজ্ঞানী,বোকা,স্বার্থপর এবং অদক্ষ হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।

দোকানদার আর আগের মত খরিদ্দার আহবান করে না।সময় পেলে ঘাড় নিচু করে ফেসবুকে তাকিয়ে থাকে।ব্যাবসা মানেই ব্যাস্ততা কথাটি আর আগের মত সত্য নয় কারন অনেক ব্যাবসায়ীকে দেখা যাচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা মাথা নিচু করে বসে আছে মানে ফেসবুকিং করছে।ডাক্তার,কবিরাজদের একই অবস্থা।সরকারী বড় বড় কর্মকর্তাদের অফিসে এখন আর বোরিং ফিল করার কিছু নাই সাথে স্মার্টফোন আর সরকারী খরচের ওয়াইফাই সংযোগ।কোনো অনুষ্ঠানে আগে দেখা যেত উপস্থিত নেতা প্রধান অতিথি হয়ে বাকী সকলের কথা শুনছে।সকলের দাবী মনোযোগ দিয়ে শুনছে কারন এই যে অবশেষে তার বক্তৃতায় সকলের দাবীর উপর কথা বলতে হবে।এখন সকলে দাবীর কথা বলতে থাকে আর নেতা বসে বসে ফোনে কথা বলে অথবা ফেসবুকিং করে।
ফোর-জি যুগের ছাত্র এবং বেকারদের কথা আর কি বলব।ফেসবুক এদের অক্সিজেনের মত।হাতে ফোন আর ফোনে ফেসবুক না থাকলে এরা রাস্তায় হাটতেও পারে না।বাজারে ভীড়ের মধ্যেও কারো মাথায় অন্যের মাথা লেগে যাচ্ছে,গায়ে গায়ে ধাক্কা খাচ্ছে তবুও দৃষ্টিচ্যুত হচ্ছে না। নিজের শরীরের দিকে,পোশাকের প্রতি নুন্যতম নজর দেবার সময় নেই।মাথার চুলে ঝড় বাতাসে লন্ডভন্ড হওয়া স্টাইল।পোশাকে ময়লার গন্ধ তবুও হাতে ২০,০০০ টাকার আধুনিক ফোন।পড়াশুনা না বুঝলেও নিত্যনতুন এ্যাপ্সের জটিল বিষয়গুলি এদের কাছে পানির মত সোজা।সত্যিই এটি আমাদের মত যুগে অচলদের জন্য খুবই কঠিন বোঝা।
শেষ কথাটি হচ্ছে- স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ক্লাস চলাকালিন সময়ে শিক্ষকদের ফেসবুক ব্যাবহার করাটা শিক্ষা বা ছাত্রদের কোনো ক্ষতি করছে কি না।বাই চয়েজে নয় বাই চান্সে যারা শিক্ষক হয়েছেন তাদের এমনিতেই ছাত্রদের তুই তুকারি করা,যত্র তত্র ধুমপান করার মত আপত্তিকর অভ্যাসগুলি রয়েছে সাথে যোগ হয়েছে ফেসবুক ব্যাবহারের হাভাতেপনা। লক্ষ্য করলে অফিসে,শ্রেনীকক্ষের বারান্দায় এমনকি শ্রেনিকক্ষেও অনেক শিক্ষকদের ফেসবুক নিয়ে কাজ করতে দেখা যাবে।এতে একজন শিক্ষক মানুসিকভাবে অন্য জগতে ইনভল্বড থাকে।ছত্রদের নিয়ে চিন্তা করা,নিজের পাঠ্যক্রমকে পরিকল্পনা মাফিক ছাত্রদের সামনে উপস্থাপন করা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যন্য কাজে মনোযোগি হওয়া এমন শিক্ষকদের জন্য অসম্ভব।ঘন্টা শুনে ফেসবুক ছেড়ে ক্লাসে যাওয়া আবার ক্লাস ছেড়ে দিয়েই ফেসবুকে চলে যাওয়া এটি স্বাভাবিক মনে হলেও শিক্ষাদানের মত মানুসিক-সেবামুলক কাজটি ১০০% বাধা গ্রস্থ হতে বাধ্য।তাছাড়া শিক্ষকদের এহেন কর্মটি ছাত্রদের ঐ কাজে উদবুদ্ধ করে নিশ্চয়ই।
যেহেতু ফেসবুকের প্রতি আসক্তি এখন চরমে,বেশিরভাগ শিক্ষক এই সত্যটি মানবেন না।আর যদি ফেসবুক ছাড়তে বলা হয়,নেহায়াত তাদের হাতে পরামর্শক গনধোলায় খাবে।ফেসবুক ছাড়তে বলে কারোর গনতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে ফেসবুকিং করা এসকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বিবেকের উপর না ছেড়ে দিয়ে সরকার যদি “শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে ফেসবুক ব্যাবহার নিষেধ” এই মর্মে একটি প্রজ্ঞাপন দিত, বিষয়টি মন্দ হত না।

Please follow and like us: