একজন সংগ্রামী নারী রেনুর করুন আর্তনাদেও বাচতে পারলো না — একাত্তর নিউজ ২৪ডটকম

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

একাত্তর নিউজ ডেস্ক :   তাসলিমা বেগম রেনু ৪০ বছরের সুন্দর নারী। পরিপাটি কাপড় পড়তেন, সুন্দর করে গুচিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে পারতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। মাস্টার্স করার পর বিয়ে হয় এক ব্যবসায়ীর সাথে। প্রথম কিছুদিন বেশ ভালোই চলছিলো সংসার।

একবছরের মাথায় কোল আলো করে আসে এক ছেলে। ছেলে পেটে থাকা অবস্থায় স্বামীর আর তর সইলো না। জড়িয়ে গেলেন পরকীয়ার। বিষয়টি প্রথমে গোপনই ছিলো। কিছুদিন পর রেনু বুঝে পারে তার স্বামী আর তার নাই। তার প্রতি আর আগের আকর্ষণ নাই। তার দুঃখের জীবন তখনই শুরু । স্বামী ইচ্ছা মতো আচরণ করেন। এর মাঝেই আবার সন্তানসম্ভবা হয়ে যান আচমকা । স্বামী ততদিনে পুরোপুরি অন্য দিকে মজে গেছে। এবার একটা ফুটফুটে মেয়েও আসলো । মেয়ে জন্মানোর কিছু দিনের মধ্যেই সাংসারিক অশান্তি চরমে উঠলো। রেনুকে বাধ্য হয়ে ডিভোর্সের পথে হাঁটতে হলো । সেই থেকে সে একা তার একলা জীবন তরী। কতোবার ভেবেছেন আত্মহত্যার করবে । করতে পারেনি, মরতেও পারেনি। মরার মথা মনে হলেই সামনে ভেসে উঠে ছেলেমেয়ের মুখ। আহা এই ছেলেমেয়ে গুলোর যে আল্লাহ আর মা ছাড়া কেউ নেই।

বাবার বাসায় ভাইয়ের সংসারে কষ্ট করে মানিয়ে চলছে সে। ছোটখাটো একটা চাকরি যোগাড় করেছে। দেখতে দেখতে ছেলে কেজিতে পড়ছে । আর মেয়ের বয়স চার পূর্ণ হলো জুন মাসে। হঠাৎ একদিন মনে হলো মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দিলে কেমন হয়..? বছরের মাঝামাঝি সময় কোথায় ভর্তি করানো যায় ভাবছিলেন। বাড্ডার একটা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ হতে পারে ভেবে সে এক দুপুরে ঐ স্কুলের গেটে দাঁড়ায়। ভিতরে ঢুকতে চাইলে আয়া ভিতরে ঢুকতে দেয় নি। তখন ভাবে ছুটি হলেই সে ভিতরে ঢুকবে। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো একা-একা। এক ভদ্রলোক তাকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কে ? তখন সে তার নাম বললো “আমি রেনু”। আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন এখানে কেনো আসছেন ? আপনি কি করেন? আপনার বাসা কোথায়? তার প্রশ্ন করার সময় আরো বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে গেলো। এতো মানুষ দেখে রেনু ভয় পেয়ে গেলো। সহজ প্রশ্নগুলোর ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলো না। অবশ্য ডিভোর্স হওয়ার পর থেকেই কিছুটা মানসিক অবসাদে ভুগছিলো রেনু। কোথায় যেনো হারিয়ে গিয়েছিলো তার সমস্ত স্বতঃস্ফূর্ততা।

তার উত্তর শুনে উপস্থিত পাব্লিক তাকে ছেলে ধরা আখ্যা দিয়ে মুহুর্তেই তার প্রতি চড়াও হয়ে গেলো, সে সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করলো “আমি ছেলে ধরা না”। তাও কিছু উশৃংখল যুবক তার উপর হামলে পড়লো। সে বললো, ” আমি বাসায় রেখে আমার দুইটা ছোট ছেলে-মেয়ে, দয়া করে আমাকে মারবেন না, আমি ভালো ঘরের মেয়ে”। কে শুনে কার কথা? অতিউৎসাহীরা কোনভাবেই ছাড়তে রাজি নয়। হাকডাক দিয়ে জড়ো করে ফেলা হলো শতাধিক মানুষ। সবার উদ্দেশ্য একটাই একজন নারী ছেলে ধরাকে জীবনের মতো শায়েস্তা করবে । শুরু হলো বেধড়ক পেটানো । সে দৌড়ে পালাতে চেয়ে ছিলো তখন উশৃংখল জনগণ তাকে ধরে এনে উপর্যুপরি কিল ঘুষি, লাত্থি মারতে শুরু করলো। কিছু লোক লাটি দিয়ে বেধড়ক পেটালো, সে আর্তচিৎকার করতে লাগলো। কাউকেই থামাতে পারলো না । কেউ একজ এসে এই উশৃংখল উন্মাদ জনতাকে থামাবে ভাবছিলো সে। কেউ থামাতে চেষ্টা করলেও বাকীরা কর্ণপাত করেনি।

একের পর এক আঘাতে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিলো। একটা ছেলে লাফ দিয়ে বুকের উপর উঠে গেলো। তাখন হৃদপিণ্ডটা থমকে গেছে। আরেকটা ছেলে লাফ দিয়ে বুক আর গলার মাঝখানে আছড়ে পরলো। মাথায় আঘাতের পর আঘাতে সে পুরোপুরি বোধ শক্তি হারিয়ে ফেললো ততক্ষণে , এখন তাকে যতোই আঘাত করা হচ্ছে তার কোথায় কোন ব্যথা অনুভূত হচ্ছেনা। সে ক্ষীণ চোখ মেলে দেখতে পারছে তার উপর পাষণ্ডরা আঘাতের পর আঘাত করছে। তার কোনই কষ্ট হচ্ছে না। সে ততক্ষণে কষ্ট বেদনার অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে।

তার শুধু মনে পড়লো তার ছেলেকে স্কুলে রেখে এসেছে, মেয়েকে খেলনা দিয়ে খেলতে বসিয়ে এসেছে। ছেলেটা কিভাবে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরবে ? মেয়েটা মাকে ছাড়া এক রাত কারো সাথে ঘুমায়নি। আহা ফুটফুটে মেয়েটার কি হবে..?? কিছুক্ষণ পর সে আর জনতার হৈ-হুল্লোড় শুনতে পাচ্ছে না। অনুভব করছে শক্ত কোন ফ্লোরে শুয়ে আছে, রাস্তার ঝাঁকুনি তার
মৃদু অনুভূত হচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত আলো নিভে গেছে। চোখ অন্ধকার ঘিরে ধরেছে । চোখ খোলার সামর্থ্য তার নেই । অস্তে অস্তে হৃদপিণ্ডের গ্রাফ নিচে নেমে যাচ্ছে, চোখ বেয়ে অনর্গল পানি পড়ছে। সে বুঝতে পারছে হায় দুনিয়া তাকে দূরে ঠেলে দিলো । কি হবে তার ছেলে মেয়ের ?

সারা শরীরে একটুও রক্তক্ষরণ নেই, ঠোঁটে দাঁতের আঘাতে সামান্য রক্ত বেড়িয়েছিলো তাও শুকিয়ে গেছে। তবে সারা শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। সাদা শরীর কালো হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নেই। গুলিতেও শরীর ঝাঁজরা হয়নি। তবুও আস্তে আস্তে হৃদপিণ্ডের গ্রাফ নিচে নেমে যাচ্ছে , ধমনিতে স্থবিরতা নেমেছে। অস্তে আস্তে শরীর শীতল হয়ে যাচ্ছে। হাত-পা কিছুই নাড়ানো যাচ্ছে না। কেউ একজন পরম যত্নে তাকে ডাকছে। বলছে তার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য যম প্রস্তুত।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ঘোষণা দিলেন রেনু আর বেঁচে নেই।

ময়নাতদন্তে দেখা গেলো রেনুর কষ্টে ভরা বুকের হাড় ভেঙ্গে হৃদপিণ্ডে ঢুকে গেছে, এ যেনো কষ্টের চির অবসান, মাথার মগজ নাক অবধি চলে এসেছে।

হায় দুনিয়া, হায় মানুষ, হায় জীবন। হায় সমাজ, হায় মানবতা, হায় মানবাধিকার, হায় অনুভূতি।
বাঙ্গাল তোমরা বেঁচে থাকো মানুষ নয় পশু হয়ে….!!

সুত্র: হাবিবুর রহমানের ফেসবুক ওয়াল থেকে।

Please follow and like us: