বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সিঙ্গিয়া রেলষ্টেশন পর্যন্ত প্রাণের ” ভৈরব নদ” পূর্ণখননের আওতায় আনা হোক।

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সিঙ্গিয়া রেলষ্টেশন পর্যন্ত প্রাণের ” ভৈরব নদ” পূর্ণখননের আওতায় আনা হোক। এলাকাবাসিও স্বাধীনতার পক্ষের সর্বরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দাবি।

 

শেখ গফ্ফার রহমান, একাত্তর নিউজ ২৪. ডেক্সঃ

ভৈরব নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমঅঞ্চলের একটি নদ। ভৈরব নদের তীরে খুলনা ও যশোর শহর অবস্থিত।

এছাড়া এর তীরে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাট, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, নওয়াপাড়া, বসুন্দিয়া, সিঙ্গিয়া রেলওয়ে ষ্টেশন, যশোরের বড়বাজার, কোটচাঁদপুর, চৌগাছা ও খুলনার দৌলতপুর ।

হিন্দু ধর্মের মানুষদের কাছে নদটি পবিত্র হিসাবে সমাদৃত।

নদটির নাম “ভৈরব” এর অর্থ “ভয়াবহ”, এক সময় গঙ্গা/পদ্মা নদীর মূল প্রবাহ এই নদকে প্রমত্তা রূপ দিয়েছিলো, সেই থেকেই নামটির উৎপত্তি।

নদটির দুইটি শাখা রয়েছে ইছামতি নদী এবং কপোতাক্ষ নদী।

ইছামতীর কিছু অংশ ভারতে, এবং বাকিটুকু বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পড়েছে, এই নদীটি সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা নির্দেশ করে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, একদা খরস্রোতা ভৈরবের

তলদেশের গভীরতা কোথাও কোথাও ৫০ ফুটের বেশি।

ছিল। ১৭৭১ সালে র্যানেলের তৈরি মানচিত্র ও ১৮৫৮ সালে ক্যাপ্টেনের মানচিত্রে ভৈরবকে বাংলার অন্যতম প্রধান নদী হিসাবে দেখানো হয়েছে। সম্রাট আলেকজান্ডারের ভারতের পূর্বাঞ্চল অভিযানে ভৈরব নদীর কথা উল্লেখ রয়েছে।  ভৈরব নদের পারে বারোবাজারে সম্রাট অশোকের সমসাময়িক প্রত্ননিদর্শন পাওয়া গেছে।  সপ্তম শতাব্দীতে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্গ যশোর শহরের মুরলীতে এসেছিলেন ভৈরব নদী বেয়ে। ১৩০০ সালে রাজা লক্ষণ সেন তুর্কী সেনাদের কাছে পরাজিত হয়ে ভৈরব নদ দিয়ে পশ্চাদপসারণ করে যশোর সদর উপজেলার আফরা গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হযরত খাজা খানজাহান আলী ১৪০০ সালে সৈন্য পরিচালনা ও নগর নির্মাণ কাজে এ নদী ব্যবহার করেছিলেন। হযরত খাজা খানজাহান আলী ষাটগম্বুজ মসজিদ নির্মাণের সময় বিহারের রাজমহল থেকে ভৈরব নদী দিয়ে জলপথে বড় আকৃতির পাথর বাগেরহাটে নিয়ে গিয়েছিলেন। বার ভুঁইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যকে দমনের জন্য সম্রাট জাহাঙ্গীরের সৈন্যবাহিনী ভৈরব নদ ব্যবহার করেছিল। এমনকি ভারতে ইংরেজ নীলকরদের প্রথম নীলকুঠি যশোর-সদরের রূপদিয়াতে ভৈরব নদের পাড়ে গড়ে ওঠে।

♦ভৈরব নদ ও ঐতিয্যবাহী সিঙ্গিয়া রেলওয়ে ষ্টেশনঃ

যশোর-সদর উপজেলার বসুন্দিয়াতে এর অবস্থান বৃটিশ-ভারতের ঐতিয্যবাহী এ ষ্টেশন ও ভৈরব নদ দিয়ে মানুষেরা ও মালামাল সহজে আনা-নেওয়া করত এবং দেশের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলাতে যাতায়াত করতো। এ ষ্টেশনে দিয়ে কলকাতা সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেছেন অনেক গুণীজন, তাদের মধ্যে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন। এ ষ্টেশনে ভৈরব নদ থেকে পানি দিয়ে রেলওয়ের কয়লা ইঞ্জিন গুলো ঠান্ডা রাখা হতো।

ভৈরব পাড়ে ছিলো ষ্টেশনের মালখানা সেখানে ভৈরব নদ দিয়ে আসা মালামাল রাখা হতো, আজ সেই মালখানাটা বিলিন করা হয়েছে। ইতিহাস বলে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত এ নদীর পারে গড়ে ওঠা বন্দরগুলোতে অনেক বড় বড়  বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করেছে।

জাহাজের দাড় ফেলাকে কেন্দ্র করে যশোর শহরের প্রাণ কেন্দ্রর নাম হয়েছে ‘দড়াটানা’ ।

ভৈরব নদী যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে

এখনও প্রবহমান রয়েছে।

ওই অঞ্চলে নদীর প্রশস্বতা ৪শ’ ফুটের বেশি।

♦নামঃ

ভৈরব নদটি তার যাত্রাপথের একেক স্থানে একেক নাম

নিয়েছে। কালীগঞ্জ হতে কৈখালি পর্যন্ত নদীটির নাম ‘কালিন্দি’, এর পর এটি ‘রায়মঙ্গল’ নামে পরিচিত।  তার পর নদীটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

পশ্চিমের অংশটি ‘হরিভাঙ্গা’, এবং পূর্বেরটি ‘ভৈরব’ নামে প্রবাহিত হয়।

কৈখালির পরে নদটি ‘ইছামতি’ নামে প্রবাহিত হয়।

দক্ষিণের অংশটি ‘রায়মঙ্গল-হরিভাঙা’ নামে পরিচিত।

ভৈরব নদের মোট দৈর্ঘ্য ২৫০ কিলোমিটার।

♦নাব্যতাঃ

বর্তমানে নদটি অনেকাংশে শুকিয়ে এসেছে। যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা পার হলে নদীটি আর নাব্যতা থাকে না, বর্ষা মৌসুমে এটি সামান্ন নাব্যতা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নদটি শুকিয়ে যায়।  তবে নদটির নিচের দিকের অংশে জোয়ার ভাটা হয়, ও তা সারাবছর নাব্যতা থাকে।

♦নদটি পূর্ণখননঃ

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সহ সমমনা রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠন “কপোতাক্ষ বাঁচাও-ভৈরব বাঁচাও” এর দির্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফলে বর্ত্যমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নদী-খাল উদ্ধারের আওতায় ২৭২ কোটি টাকা ব্যায়ে ভৈরব নদ পূর্ণখনন শুরু করেছে।

♦দাবিঃ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিয্যবাহী সিঙ্গিয়া রেল ষ্টেশন পর্যন্ত ভৈরব নদটি খননের দাবীটি উপক্ষিত হয়েছে এ খনন প্রকল্পের আওতা থেকে তাই এত্র এলাকাবাসিও স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দাবি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সিঙ্গিয়া রেলষ্টেশন পর্যন্ত ভৈরব নদ খননের আওতায় আনা হোক।

Please follow and like us: