একাত্তর নিউজ যশোর অফিস :
ভয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ এসআই খায়রুলের নাম প্রকাশ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। তিনি এখন এসআই খায়রুলসহ সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন।
যশোরের শার্শার উপজেলার লক্ষ্মণপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগকারী ওই গৃহবধূ শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে তার বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি খায়রুলকে শুধু চিনি-ই নাই, ভালোভাবেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৮ ও ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছেন তিনি। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীরে ধরে নিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন খায়রুলকে আমার সামনে নিয়ে আসছিল এবং জিজ্ঞেস করছিল- ইনি ছিলেন কিনা। তখন আমি বিবেচনা করে দেখলাম, সে তো পুলিশের লোক। যখন সে বারেবারে আমার স্বামীরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে আমি পারবো না। তাছাড়া খায়রুল আমার দিকে এমনভাবে তাকাইছে,তার চোখের ভাষায় আমি বুঝতি পারছি।’
ধর্ষণের সময় এসআই খায়রুল উপস্থিত ছিলেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিপোর্টে তো প্রমাণ আসবে। আর আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলিও তারা সেসব বলবে। কারণ তারা আরও ভালো জানে।’
এসআই খায়রুলসহ আরও যে তিন আসামি রয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘তাদের শাস্তি দেখে আরও ৫/১০ জন মানুষ যেন এমন অপকর্ম করতে সাহস না করে।’
এর আগে পুলিশ দাবি করেছিল, এসআই খায়রুল আলমকে ওই গৃহবধূর সামনে উপস্থিত করা হলে তিনি তাকে চিনতে পারেননি। সেজন্য তার নাম বাদ দিয়ে মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমান বলেন, ‘ওই গৃহবধূ সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনেই এসআই খায়রুল সম্পর্কে তার বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাকে কোনও প্রকার ভয়ভীতি বা চাপ দেওয়া হয়নি।’
তবে আজ কেন ভয়ের কথা বলছেন— এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘হয়তো কেউ তাকে দিয়ে এখন এসব বলাচ্ছে। হয়তো কেউ ব্যক্তিগত কোনও স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব করাচ্ছে।’
এদিকে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ও ফোরামের জেলা নেতারা ওই নারীর বাড়িতে যান। তারা ওই গৃহবধূর খোঁজখবর নেন এবং আইনগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
পরে নিপুণ রায় বলেন, ‘সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারী আকার ধারণ করেছে। ৯ মাসের শিশু থেকে বৃদ্ধা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। এই মহামারী থেকে দেশকে মুক্ত করতেই নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্যাতিত গৃহবধূর মুখ থেকেই আপনারা সবকিছু শুনেছেন। এসআই খায়রুলসহ চারজনের নাম এসেছে। তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, হাসপাতালে গিয়েছেন, মামলা করেছেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে এসআইকে মামলায় এজাহারভুক্ত করা হয়নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় ক্ষমতার যে অপব্যবহার চলছে- তা এখানে বিদ্যমান।’
বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে এসআই খায়রুলকে এক নম্বর আসামি করে তাকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার লক্ষ্মণপুর এলাকায় ওই গৃহবধূ বাড়িতে ২ সেপ্টেম্বর গভীররাতে যায় এসআই খায়রুল, সোর্স কামারুলসহ চারজন। তারা ওই গৃহবধূর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই খায়রুল ও কামারুল তাকে ধর্ষণ করেন বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন।
৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওই গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এলে বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। ওইদিন রাতেই শার্শা থানায় একটি মামলা করেন গৃহবধূ। মামলায় এসআই খায়রুলের নাম রাখা হয়নি। আসামি করা হয় কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল, লক্ষ্মণপুর এলাকার আব্দুল লতিফ এবং আব্দুল কাদেরকে এবং একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এ ঘটনা তদন্তে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানিয়েছিলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে,সেখানে কার কার সিমেন (বীর্জ) রয়েছে তা জানতে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন এবং তার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।