যশোরে শার্শায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৪৮তম শাহাদৎ বার্ষিকী পালিত

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

 শাহাবুদ্দিন আহমেদ,বেনাপোল প্রতিনিধি : যশোরের শার্শায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে, বীরশ্রেষ্ঠ লেন্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের, ৪৮তম শাহাদৎ বার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে, শার্শা উপজেলার কাশিপুরে শহীদের সমাধী সৌধে। বিভিন্ন কর্মসূচী’র পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। ডিহি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান হোসেন আলী বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে। তাঁর সমাধি সৌধে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি স্মরণ করা হয়। জানা গেছে, বিজিবি মহাপরিচালকের পক্ষে গার্ড অব অনার প্রদর্শন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন – যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর নজরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিবির সহকারী পরিচালক ইমাম হোসেন। এছাড়া এসময় শার্শা উপজেলা পরিষদের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল, শার্শা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর হোসেন, সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম এবং ডিহি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসেন আলি, সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাদ্রাসা এবং পরিবারে পক্ষ থেকে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের বড় ছেলে শেখ গোলাম মোস্তফা কামাল। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা সহ ছাত্র-ছাত্রীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তিনি। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাঁকে সমাহিত করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডীবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে (বর্তমানে নাম নূর মোহাম্মদনগর) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. আমানত শেখ ও মাতা মোসা. জেন্নাতা খানম। ডানপিটে নূর মোহাম্মদ পড়ালেখায় বেশিদূর এগোতে পারেননি। স্থানীয় বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় তাঁর শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটে। এরপর ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নূর মোহাম্মদ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর সেক্টরে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে বদলি হয়ে আসেন। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ৮নং সেক্টরে সাবেক ইপিআর ও বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিতে যোগদান করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান (নূর মোহাম্মদ)। এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বেও প্রাণ-পণ লড়েছেন সাহসী এ বীর সন্তান নূর মোহাম্মদ। ৫ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর গুলিতে নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলে সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রুপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করেন তিনি। গুলি ছুড়েছেন পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙে যায়। তবুও গুলি চালান। শক্রমুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।

Please follow and like us: