নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর :
যশোরে চলমান লকডাউনকে যারা পাত্তা দিতে চাচ্ছেন না এবং এখনো বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন এবং স্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন তাদের জন্য ভাল সংবাদ নেই। কারণ গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ রোগী শনাক্ত হয়েছে যশোরে। তাও মাত্র ৬৫ টি নমুনা রীক্ষা করে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার সুত্রে এ তথ্য জানাগেছে । তবে সুখবর আছে বৃহত্তর যশোরের অপর ৩ জেলা নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহর জন্য। যবিপ্রবিতে সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষায় এই ৩ জেলা থেকে কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে গত ২৪ ঘন্টায় মোট ১১৩ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ছিল যশোরের ৬৫টি, ঝিনাইদহের ৩৩টি, মাগুরার ৯টি এবং নড়াইলের ৬টি নমুনা। যশোরের নমুনাগুলোর মধ্যে ১১টিতে পাওয়া গেছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব। ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলের সবগুলো নমুনার ফলাফল নেগেটিভ হয়েছে। অর্থ্যাৎ গত ২৪ ঘন্টায় যবিপ্রবিতে মোট ১১৩ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ১১টি পজিটিভ ও ১০২টি নেগেটিভ হয়েছে।
এদিকে আজকের ১১টিসহ যশোরে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা এখন ৫৫। গতকাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৪৪। যশোর সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানাগেছে, এই ৪৪ জনের মধ্যে সর্বাধিক ১৪ জন রয়েছে সদর উপজেলায়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চৌগাছা। এ উপজেলা থেকে আক্রান্ত হয়েছে ১১ জন। এছাড়া কেশবপুরে ৭ জন, শার্শায় ৫ জন, ঝিকরগাছায় ৩ জন এবং বাঘারপাড়া ও মণিরামপুরে ২ জন করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ মানুষ যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসক, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্স এবং স্বাস্থ্য সহকারীও।
এদিকে যশোরের পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় জেলা প্রশাসন গোটা যশোরে লকডাউন ঘোষণা করেছে আগেই। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া এবং অতিপ্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন তাদের কঠোরভাবে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এরপরো বাজার, রাস্তা ঘাট ও চায়ের দোকানে লোকজনকে যেভাব দেখা যাচ্ছে তাতে তারা সরকারি নির্দেশনা মানছেন বলে মনে হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সুত্র জানায়, যশোরের পরিস্থিতি নাজুক হতে পারে। প্রাপ্ত ফলাফলই তার প্রমাণ। সূত্রটি চৌগাছা হাসপাতালের একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন, করোনা ভাইরাস যে কতটা ছোয়াছে ও ভয়ংকর তা অনেকে আচ করতে পারছেন না। গত ২২ এপ্রিল চৌগাছা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে এক গর্ভবতি নারী চিকিৎসার জন্য আসেন। ঐ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার ঐ মহিলার চিকিৎসা করতে গিয়ে তার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখতে পান। এজন্য তার নমুনা সংগ্রহ করে পরদিন তা পরীক্ষার জন্য যশোরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে পরীক্ষায় তার করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। ঐ রোগীর করোনা পজিটিভ হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন তার দেখভাল করতে থাকা নার্সরা। ঐ রোগী যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন ৩ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স তার দেখভাল করেছিলেন। এ জন্য তাদের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। এরপর তা পরীক্ষার জন্য ২৬ এপ্রিল যশোর সিভিল সার্জন দপ্তরে পাঠানো হয়। ভয়ংকর খবর হলো, সেই ৩ নার্সই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের ফলাফল পজিটিভ হয়েছে। এখন তারা হোম আইসোলেশনে থেকে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। বিরাজমান অবস্থায় সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে এ ব্যাপারে ঘরের বাইরে বের হওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার ব্যাপারে আরো সাবধানতা অবলম্বন করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন যশরের সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন। তিনি জানান, জনসংযোগ এড়িয়ে চলাই হলও এ ভাইরাস থেকে রক্ষার অন্যতম উপায় । তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এদিকে বিরাজমান অবস্থায় জনগণকে করোনা থেকে রক্ষা করতে বড় বাজার থেকে কাঁচা বাজার সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। কাল থেকে ঈদগাহ ময়দানে কাঁচা বাজার ও টাউন হল ময়দানে মাছ বাজার বসবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা এজন্য গতকাল এদুটি স্থান পরিদর্শনও করেছেন।