রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরাতে ফিলিপাইনকে চাপ দিবে এপিজি

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128
সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত দিতে ফিলিপাইনের ওপর চাপ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। এপিজি বলছে, কোনো দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন পুরোপুরি পরিপালন করলে এ টাকাটা ব্যাংকের বাইরে যেত না। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে ফিলিপাইনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন পরিপালনে বেশ দুর্বলতা রয়েছে।

ফিলিপাইন সদস্য দেশ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এপিজি চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এ হিসেবে তারা ফিলিপাইনের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। কারণ বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন দুই দেশেই এপিজির সংসদ্য দেশ।

রোববার অর্থ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা এবং নীতিপ্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সঙ্গে এপিজির পরিচালক ডেভিট শ্যানন ও মোস্তফা আকবরের বৈঠক হয়। বৈঠকে তারা বাংলাদেশকে এ আশ্বাস দেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান প্রমুখ।

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিলিপাইন বাংলাদেশকে ফেরত দিচ্ছে না- এ বিষয়ে এপিজি কিছু বলেছে কিনা? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান  বলেন, এটা নিয়েও তারা একটু আলাপ করেছেন। এপিজি বলছে যেসব দেশে মানি লন্ডারিং বিষয়গুলো পুরোপুরি পরিপালন না হয় সেসব দেশে যেমন- ফিলিপাইন; এসব দেশে এগুলো বেশি হয়। সে দেশে মানি লন্ডারিং বিষয়টা পরিপালন করা হতো তাহলে টাকাটা ব্যাংকের বাইরে যেত না।

উল্লেখ্য,  হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।

ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসিতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও শ্রীলঙ্কার দু’টি ব্যাংকে ২ কোটি ডলার স্থানান্তর করা হয়েছিলো। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে স্থানান্তর হওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়েছে। ফিলিপাইনের আরসিবিসি থেকে ফেরত আনা হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। এখনো ফেরত আসেনি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা হয়েছে। আইনি লড়াই মোকাবেলা করার জন্য দেশটিতে দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টাকা উদ্ধারে  ল’ ফার্ম দুটির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে যে চুরি যাওয়া ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার করে দিতে পারলে ল’ ফার্ম দু’টিকে মোট অর্থের ১০ ভাগ দেওয়া হবে।

জানা যায়, হ্যাকাররা চুরির অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছে। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোতে রূপান্তরের পর দু’টি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়।

রিজার্ভ চুরির এ ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি আরসিবিসির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে সাজা দিয়েছে ফিলিপাইনের আদালত। এছাড়া তাকে সর্বমোট ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করেছে দেশটির আদালত।

Please follow and like us: