একাত্তর নিউজ ডেস্ক :
অদম্য মেধাবী তামান্নার কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করা হবে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
পা দিয়ে লিখে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া যশোরের ঝিকরগাছার অদম্য মেধাবী তামান্না আক্তার নুরার কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করা হবে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। এ লক্ষ্যে ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ মার্চ ২০২২) মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তামান্নার খোঁজখবর নেন এবং পরে তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আগামীকাল তামান্নার কিছু পরীক্ষা-নিরাক্ষা করা হবে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম, হাঙ্গেরির ডা. পাটাকি, জার্মানির ডা. কৃষ্ণা ও বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমাম ইমু।
সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘যশোরের তামান্না আজ আমাদের হাসপাতালে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ শেখ রেহানা সরাসরি তামান্নার বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নিতে বলেন।’
ডা. সেন বলেন, ‘দুজন বিদেশি চিকিৎসকসহ আমরা তামান্নাকে দেখেছি। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। তবে কতটুকু আমরা সফল হতে পারব এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব না।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. আর আর কৈরী বলেন, ‘তামান্নার এক্স-রেসহ অনেক পরীক্ষা করতে হবে। আগে দেখতে হবে যে বাঁ পা ঠিক আছে কি না। ওই পায়ে ভর দিয়ে যদি দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকে, তাহলে আর্টিফিশিয়াল পা লাগানো যাবে। আবার দেখতে হবে হাতের জয়েন্ট ঠিক আছে কি না! এসব বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে এখনই কিছু বলা সম্ভব হবে না।’
বাবা রওশন আলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী, ওনার বোন শেখ রেহানা ও শিক্ষামন্ত্রী আমার মেয়েকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ওনাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমার মেয়ে তামান্নার হাত, পা লাগানোর বিষয়ে হাসপাতালে এসেছি। চিকিৎসকেরা আমার মেয়ের প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেছি।’
তামান্নার মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তামান্নার জন্ম। ওর জন্মের পর কষ্ট পেয়েছিলাম। ছয় বছর বয়সে ওর পায়ে কাঠি দিয়ে লেখানোর চেষ্টা করলাম। কলম দিলাম। কাজ হলো না। এরপর মুখে কলম দিলাম, তাতেও কাজ হলো না। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, ওকে পা দিয়েই লেখাতে হবে। এরপর বাঁকড়া আজমাইন এডাস স্কুলে ভর্তি করালাম। মাত্র দুই মাসের মাথায় ও পা দিয়ে লিখতে শুরু করল। এরপর ছবি আঁকা শুরু করল।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে তামান্না আক্তার নুরা বলেন, ‘আমি অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সম্ভব হয়নি। আজ ৮ মার্চ নারী দিবস। এই দিবসটি একটি দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো বিষয়েই নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। নারীরা আজ বিমান চালাচ্ছে।’