একাত্তর নিউজ ডেস্কঃ
‘এই রূপালি গিটার ফেলে, একদিন চলে যাব দূরে, বহুদূরে। সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো, গোপন করে…।’ কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা বরেণ্য শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ফেলে যাওয়া রূপালি গিটার ফিরে আসছে, এই নগরে। শিল্পীর স্মৃতি স্মারক হয়ে অপলক চীত্রে চেয়ে থাকবে ভক্তদের দিকে। নিজ জন্মভূমে স্মৃতিময় রূপালি গিটার প্রতীক হয়ে থাকবে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও হৃদ্যতার প্রতীক হয়ে। চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়ে বসানো হয়েছে খ্যাতিমান শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ‘রূপালি গিটার’।
ইতোমধ্যে গিটার স্থাপন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে এই রূপালি গিটার বসানো হয়েছে। থাকছে একটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা এবং আইয়ুব বাচ্চুর জীবনী।
চসিক মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর নিজ জন্মস্থান এই চট্টগ্রাম। জন্মস্থানে কিংবদন্তি এ শিল্পীকে স্মরণ করে রাখতে নগরের প্রবর্তক মোড়ে ‘রূপালি গিটার’ এর আদলে একটি প্রতিকৃতি বসানো হয়েছে। আগামীকাল সন্ধ্যায় চসিক মেয়র এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ গিটারের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম আইয়ুব বাচ্চুকে মনে রাখবে, বেঁচে থাকবে তাঁর গান।’
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামের সন্তান। স্মৃতিতে জাগরুক রাখতে এবং তাঁর অমলিন স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কারণ একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে তো তাঁর খ্যাতি আছেই, পাশাপাশি একজন গিটারিস্ট হিসাবেও তাঁর খ্যাতি ছিল ঈর্ষণীয়। গিটারের তারে যাদুকরী সুরের মূর্ছনা তোলার মত শিল্পী হিসাবে তিনি ছিলেন অনন্য।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু গত বছরের ১৮ অক্টোবর চলে যান না ফেরার পথে। গিটারে আঙুলের স্পর্শ আর অসাধারণ গায়কিতে তিনি কেবল সঙ্গীত অনুরাগীদের মাতোয়ারা করেননি, দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতকে অন্য মাত্রায় উন্নীত করেছেন। গিটারের সুরের সঙ্গে কণ্ঠের কারুকার্যে এ দেশের অগণিত সঙ্গীতানুরাগীদের হৃদয়ে ঝড় তুলেছিলেন সঙ্গীত আঙিনার এই রাজকুমার। কেবল দেশে নয়, বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছেও তিনি বাংলাদেশের ব্যান্ডের গানকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।
১৯৭৭ সালে সঙ্গীত জীবন শুরু করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে তিনি ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে যোগ দেন। তার প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। এরপর যোগ দেন সোলেস। ১৯৮০ থেকে পরবর্তী এক দশক এই ব্যান্ডে যুক্ত ছিলেন। সোলস ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে নিজে গঠন করেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। প্রথমে এলআরবির পূর্ণ অর্থ ছিল লিটল রিভার ব্যান্ড। পরে এই নামে অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটি ব্যান্ড থাকায় বদলে করা হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।
১৯৮৬ সালে ‘রক্তগোলাপ’ নামে তার প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ পায়। আর এলআরবির প্রথম অ্যালবাম হল এলআরবি (১৯৯২)। এরপর এ ব্যান্ডের সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২) প্রকাশ পায়।
একক অ্যালবামের মধ্যে রক্ত গোলাপের পর রয়েছে- ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কী! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)।
তাঁর খ্যাতি পাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘চলো বদলে যাই’, ‘রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ইত্যাদি।