শেখ গফ্ফার রহমান, যশোর প্রতিনিধিঃ
লবনের দাম দুইশ টাকা হবে, এমন গুজবে সারাদেশের মত যশোরের খুচরা বাজারগুলোতে লবণের দাম নিয়ে চলছে অস্থিরতা।
এক দিনের ব্যবধানে লবনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০-৪০ টাকা। এক এক খুচরা ব্যবসায়ী এক এক রকম দাম হাঁকছেন ক্রেতা সাধারণের কাছে।
এ নিয়ে ক্রেতা সাধারনের মধ্যে চলছে অস্থিরতা ও ক্ষোভ।
দাম বাড়ার খবরের পর খুচরা বাজারগুলোতে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তারা।
গত সোমবার ফেসবুকের একটি পোস্টে গুজব ছাড়ানো হয়, লবনের দাম দুইশ টাকা হবে।
এরপর থেকেই দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে লবণের দাম বাড়িয়ে দেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের সবকয়টি জেলায় হুট করে অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়িয়ে দেন খুচরা বিক্রেতারা।
এতে করে ক্রেতাদের মধ্যে লবণ কেনার হিড়িক লেগে যায়। অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
যশোরের বাসিন্দা আব্দুর রব (৬৯) বলেন, তিনি ৫০ টাকা দিয়ে এক কেজি এসিআই লবন কিনেছেন।
অথচ প্যাকেটের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা ছিল ৩৫ টাকা।
তিনি জানান, বাজারের বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছামতই লবনের দাম চাচ্ছেন।
এক দোকানে তার কাছে এক কেজি লবনের দাম চাওয়া হয় ৬০ টাকা, আরেকটি দোকানে চাওয়া হয় ৫৫ টাকা।
একই এলাকার পাল স্টোরের বিক্রেতা জনান, গুজবের পর সকালে এলাকার প্রায় সব দোকানে লবনের জন্য ভীড় লেগেই আছে ২০-৩৫ টাকা কেজিতে লবন বিক্রি হয়েছে।
তারা ডিলার তাই পূর্বের দামেই লবন বিক্রি করছেন।
একইসঙ্গে তিনি প্যাকেটের দামেই লবন বিক্রি করছেন বলে জানান।
তবে অনেকে লবন সরিয়ে ফেলছেন দোকান থেকে, কোন কোন বিক্রেতা আবার দোকান বন্ধ করে ফেলছেন।
নওয়াপাড়া বাজারের বড় মুদির দোকানে গিয়ে লবনের দাম জিজ্ঞাসা করলে তাহারা বলেন, লবন নেই তাই বিক্রি করছেন না।
কেন নেই? বিক্রি করছেন না কেন জানতে চাইলে ওই বিক্রেতা কোন উত্তর না দিয়ে দোকান বন্ধ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।
এছাড়া সাংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, রাজধানীর কারওয়ান বাজারেও প্রতি কেজি লবনের দাম ৮০-১০০ টাকা চাচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা।
পুলিশ আসার খবর পেয়ে দোকান থেকে লবন গায়েব করে ফেলেন বেশ কিছু দোকানের ব্যবসায়ী।
রাজধানী ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায়ও গুজবের বিরূপ প্রভাব পড়েছে ইতিমধ্যে।
এসিআই সল্টের জৈনক ডিলার বলেন, একটি গুজবের উপরে ভর করে জনগণ হঠাৎ করে এ ভাবে লবণ ক্রয় শুরু করেছে। আমরা পূর্বের দামেই লবণ বিক্রি করছি। এই মূহুর্তে দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনাও নেই।
এদিকে লবনের দাম বৃদ্ধির গুজবে বিভ্রান্ত না হবার জন্য অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন।
সংস্থাটি মঙ্গলবার এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে লবণের কোন ঘাটতি নেই।
বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। সম্প্রতি লবণ নিয়ে একটি অসাধু চক্র বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে তা থেকে মুনাফা লুটের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গুজবে কান না দেয়ার জন্য দেশবাসীকে সচেতন করেছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
এছাড়া মঙ্গলবার কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত সভায় লবন মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেছেন, বর্তমানে কক্সবাজারে তিন লাখ মেট্রিক টনের ওপরে লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে।
সারাদেশের মোকামে রয়েছে আরো প্রায় তিন লাখ মে.টন লবণ।
এরপরও অসাধু কিছু মিল মালিক মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট বাজারে সয়লাব করছে।
বন্ড লাইসেন্স, কাস্টিং সল্ট ইত্যাদি নামে লবণ আমদানি করছিল একটা শ্রেণী।
আমাদের কঠোরতায় ওই রকম লবণ আমদানি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
লবণের জাতীয় চাহিদা নিরূপণে সবাইকে এক টেবিলে বসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা লবণ ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব।
ঘরের সমস্যা ঘরেই সমাধান করা দরকার।
খুচরা বিক্রেতারা লবণের দাম হুট করে বাড়িয়ে দেয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের ভোক্তা সাধারণ।
অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরত্ব যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করছেন তারা।