শেখ গফ্ফার রহমান, স্টাফ রিপোর্টারঃ
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সরাসরিভাবে সড়ক পথে রাজধানীর যোগাযোগের লক্ষ্যে আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক পথে ঢাকার যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু। এ সেতুটিও এই জুন মাসে উদ্বোধন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অপার সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হবে। সরাসরি উপকৃত হবে নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার মানুষ। বদলে যাবে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা।
২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া সেতুটির ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এরই মধ্যে। কর্তৃপক্ষের দাবি, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি জুন মাসের শেষ দিকে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় ও দেশীয় অর্থে সেতুটি নির্মাণ করছে জাপানের টেককেন কর্পোরেশন ওয়াইবিসি জেভি কোম্পানি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড। এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এ সেতুর কারণে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে যশোরের শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও বাগেরহাটের মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্বও অনেক কমে যাবে।
কালনা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য চালু হলে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর-নড়াইলের কালনা সেতু-পদ্মা সেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’ স্থাপিত হবে। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্য সরাসরি কালনা এবং পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনেন সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা কালনা ফেরি ঘাটের দু’পাড়ে আর বসে থেকে জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। সময় বাঁচবে। কৃষি পরিবহন ও বিপণন সহজ হবে। এক কথায় বৃদ্ধি পাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম, পাল্টে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান।
নড়াইল জেলার সীমান্তবর্তী লোহাগড়া উপজেলার কালনা এবং অপরপ্রান্ত গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় মধুমতি নদীর ওপর ছয় লেনের সেতুটি ৬৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৭ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট। এ সেতুর দুই অংশে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কালনা সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তখন থেকে ৩৬ মাস অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩০ জুন ছিল মেয়াদ কাল। পরে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই অর্থ্যাৎ পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গেই কালনা সেতু চালুর লক্ষ্য নিয়ে নির্মাণ কাজ দিন-রাত দুই শিফটে চলছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধুমতি নদীর পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে ও পশ্চিমপাড়ে পাথর-বালুর ঢালাইয়ের কাজ চলছে। সংযোগ সড়কের ১৩টি কালভার্টের কাজ এবং আটটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। নদীর পূর্ব পাড়ে টোল প্লাজা নির্মাণ কাজ চলছে। এটি হবে ডিজিটাল টোল প্লাজা। সেতুর মাঝখানে ধনুকের মত বাঁকা সুদৃশ্য ডিজাইন করে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। তৈরি করেছে জাপানের নিপ্পন কোম্পানি। এটিই ছিল সেতুর সবচেয়ে বড় কাজ, তা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ওই স্প্যানটির উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। মোট ১৩টি স্প্যানের মধ্যে পিসি গার্ডারের দুটি স্প্যানের কাজ বাকি আছে।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ, নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুজ্জামান সংবাদিকদের বলেন, ছয় লেনের এ সেতুটিকে মূলত এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ছয় লেনের মধ্যে চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। এ সেতুর সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ ভাগের কিছু বেশি।
তিনি আরও বলেন, সড়ক ও জনপথের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি সেতুর কাজ পরিদর্শন করেছেন। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ৩০ জুন থেকে যেন এ সেতুতে গাড়ি চলাচল করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।