যাবতীয় যান্ত্রিক ত্রুটি সমাধানের পর আবারও চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে ভারতীয় মহাকাশযান ‘চন্দ্রযান-২’। দেশটির দ্বিতীয় এই চন্দ্র অভিযান শুরু হচ্ছে সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে।
রবিবার (২১ জুলাই) ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) পাঠানো টুইটের বরাতে গণমাধ্যম ‘এনডিটিভি’ জানায়, উৎক্ষেপণ মহড়ার পর ‘চন্দ্রযান-২’ চাঁদে পাঠানোর জন্য স্বাভাবিক বলে দেখা গেছে। এতে পরবর্তী আপডেটের জন্য ইসরোর সঙ্গে থাকতে অনুরোধ জানানো হয়।
এর আগে যদিও গত সোমবার (১৫ জুলাই) স্থানীয় সময় ভোর রাত ২টা ৫১ মিনিটে চাঁদের অদেখা অংশের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর কথা ছিল ভারতের তৈরি এই যানটির। তবে উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ আগে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ে আর নিজের অভিযান শুরু করতে পারেনি ‘চন্দ্রযান-২’। যাত্রা শুরুর মাত্র ৫৬ মিনিট আগে স্যাটেলাইট বহনকারী রকেটের তেল বহনকারী ট্যাংকিতে ছিদ্র দেখা দিলে অভিযানটি পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
তখন ঐতিহাসিক এ মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করার জন্য ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ। পরে তাৎক্ষণিক ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, উৎক্ষেপণের পরবর্তী তারিখ খুব শিগগিরই জানানো হবে।
‘বিবিসি নিউজে’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ন মহাকাশ কেন্দ্র (এসডিএসসি) থেকে সোমবার (২২ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে অত্যন্ত শক্তিশালী, সর্বাধুনিক ‘জিএসএলভি-মার্ক-৩’ রকেটে চেপে ‘চন্দ্রযান-২’-এর যাত্রা করবে। যেখানে থাকবে একটি ‘অরবিটার’; যা চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথে থেকে প্রদক্ষিণ করবে। তাছাড়া এতে আরও থাকবে একটি বিক্রম নামের ল্যান্ডর ও প্রজ্ঞান নামের একটি রোভারও। যা চন্দ্র পৃষ্ঠের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াবে।
ইসরো জানায়, ১৫ কোটি ডলারে নির্মিত ‘চন্দ্রযান-২’ চাঁদ থেকে পানি, খনিজ ও পাথর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। উৎক্ষেপণের প্রায় দেড় মাস পর সেপ্টেম্বরে (৫ তারিখ গভীর রাত ও ৬ তারিখ ভোর রাতের মধ্যে) চাঁদের পিঠে পা ছোঁয়াবে ল্যান্ডর ‘বিক্রম’। নামার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ল্যান্ডর থেকে বেরিয়ে আসবে খুবই ছোট একটি রোভার ‘প্রজ্ঞান’। যার ওজন মাত্র ২০ কিলোগ্রাম। আর চন্দ্রযান-২-এর সার্বিক ওজন ৩ হাজার ৮৫০ কিলোগ্রাম। ল্যান্ডরটি নেমে আসার সময় চন্দ্রযান-২-এর অরবিটারটি চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে থাকবে মাত্র ১০০ কিলোমিটার ওপরে।
এর আগে ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন চাঁদের কক্ষপথে গিয়েছিল ‘চন্দ্রযান-১’। চাঁদে পানির অন্যতম উপাদান হাইড্রক্সিল আয়নের খোঁজ দিয়েছিল যানটি।
প্রসঙ্গত, চন্দ্রযান ২ এর উৎক্ষেপণ সফল হলে ভারতই হবে বিশ্বে চতুর্থ দেশ, যাদের রোভার চাঁদের মাটিতে নামবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন চাঁদে মহাকাশ যান পাঠিয়েছে।