তাপস হালদার :
২৮ সেপ্টেম্বর ছিল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন। জাতির পিতা ও বঙ্গমাতার প্রথম সন্তান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই জাতিসংঘের সম্মেলনের কারণে এই সময়টা দেশের বাহিরে থাকতে হয়। সঙ্গত কারণে দেশের জনগণের সঙ্গে জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ থাকে না। তিনি নিজে কখনও জন্মদিন পালন না করলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সব প্রগতিশীল সংগঠনগুলো নানা আয়োজনে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের জন্য। সে জন্যই আজ বাংলাদেশের অবস্থান একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকেই উদাহরণ দেওয়া হয়। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্যবিমোচন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য পেয়েছেন বিরল সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পুরস্কার। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংহতি বিষয়ক সংস্থা ‘ইউনেস্কো’ কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় ছিল বিরাট সাফল্য। কেননা বাংলাই একমাত্র ভাষা, যে ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। আজ পৃথিবীর সব রাষ্ট্রসমূহ এ দিবসটি পালন করে। এটা বাংলাদেশের কৃতিত্ব। জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশে^র অন্যতম নেতা যিনি বারংবার জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি ও চ্যালেঞ্জকে বিশ^বাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। স্বল্পোন্নত ও দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনে যে কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে সে বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সারা বিশে^ তিনিই জোরালো কণ্ঠস^র। সঙ্গত কারণেই জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রীকে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সমুদ্রসীমার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভারতের কাছ থেকে ১৯৪৬৭ বর্গকিলোমিটার ও মিয়ানমারের কাছ থেকে ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় অধিকার আদায় করা হয়েছে। কোনো প্রকার সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়া এহেন বিরোধ নিষ্পতির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। দীর্ঘ ৪১ বছর পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বাংলাদেশ ১১১টি ছিটমহলে ১৭ হাজার ১৬০ একর জমি পেয়েছে, ভারত পেয়েছে ৫১টি ছিটমহলের ৭ হাজার ১১০ একর জমি।
বিশে^র প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমূহ যখন জঙ্গিবাদের কালো থাবায় আক্রান্ত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির কারণে জঙ্গি দমন ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। হলি আর্টিজেনের ঘটনাসহ আরও কয়েকটি ঘটনা যেভাবে দ্রুত মোকাবেলা করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বিশ^নেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মডেল দেশ এখন বাংলাদেশ। জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক-নির্দেশনা ও সফল বাস্তবায়নের ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। শুধু ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশই নয় অনেক উন্নয়নশীল দেশ থেকেও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ব্যাপক।
চন্ডীদাস বলেছেন, ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই’। যখন মিয়ানমারে জাতিগত নিধনে লাখ লাখ মানুষ অসহায়, সম্বলহীন হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছিল তখনই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দরজা খুলে দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পৌঁছে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী শিবির এখন বাংলাদেশে। তলাবিহীন ঝুড়ি আজ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ যাবতীয় ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘসহ বিশে^র সব দেশের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’র খেতাব। বিশ^ মন্দার কারণে উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিও যখন টালমাটাল তখন বাংলাদেশ শুধু মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই হয়নি এক দশক ধরে জিডিপি ৭ শতাংশের ওপরেই ধরে রেখেছে। এবার ধরা হয়েছে ৮.১৩ শতাংশ। বিশে^র বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, এটা কীভাবে সম্ভব? এটাই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠতা, উন্নয়নের ম্যাজিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আলোচিত ও প্রশংসিত একটি নাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর অন্য কোনো বাঙালি রাষ্ট্রপ্রধান বিশ^ নেতৃত্বের কাছে এত সম্মান আর ভালোবাসা পায়নি, যেমনটা পেয়েছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘খালিজ টাইমস’ এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘শেখ হাসিনা নিউ স্টার অব দ্য ইস্ট’। শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের অহঙ্কার, সারা বিশে^র বিস্ময়।
সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ
সাবেক ছাত্রনেতা