গফ্ফার রহমান, একাত্তর নিউজ যশোর অফিস:
“জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চারণের উপর জোর দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় স্লোগান হিসেবে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।”
এক রিট আবেদনে দুই বছর আগে দেওয়া রুলের নিষ্পত্তি করে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বশীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ,বি,এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদেশে আদালত বলেছে, “আমরা ঘোষণা করতেছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। সকল জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকর্তা সরকারী অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে যেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
“সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পর ছাত্র-শিক্ষকগণ যেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।”
রায় বাস্তবায়নের অগ্রগতির প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এর আগে রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, ‘জয় বাংলা’ জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
“আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা দাবি করেছেন। কিন্তু এটা এই আদালতের এখতিয়ারবর্হিভূত। কারণ কোনো আইন প্রণয়ন এবং সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।”
তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছে উল্লেখ করে রায়ে আদালত বলেছে, আইনসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করায় একমত পোষণ করেছেন।
জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করার আর্জি জানিয়ে আইনজীবি বশীরের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও শিক্ষা সচিবের প্রতি রুল জারী করা হয়। ‘জয় বাংলা’কে কেন ‘জাতীয় স্লোগান ও মূলমন্ত্র’ হিসেবে ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয় তাদের কাছে।
আদালতে আবেদনকারী নিজেই শুনানি করেন; রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবীও বক্তব্য দিয়েছেন আদালতে। সবাই ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
রায় ঘোষণার পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, “রায়ে আদালত বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে জয় বাংলা।
“তবে আদালত বলেছেন, তাদের (কোর্ট) সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবেদনকারী, সকল আইনজীবীর (এর রুল শুনানিতে যেসব আইনজীবীর মতামত নিয়েছে আদালত) আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে আদালতও একমত। কিন্তু আইন প্রণয়ন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা হাই কোর্ট বিভাগের নেই।
“তবে আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, রাষ্ট্র চাইলে, আইন বিভাগ যদি মনে করে সংবিধান সংশোধন করে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করে আইনগত কার্যকারিতা প্রদান করা সম্ভব।”