একাত্তর নিউজ ডেস্ক : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নতুন কমিশনার নিয়োগ হতে যাচ্ছে চলতি সপ্তাহে। বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় ইউনিট হিসেবে ডিএমপি কমিশনার পদে কে আসছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পদে সাধারণত সরকারের আস্থাভাজন, চৌকস ও দক্ষ এমন পুলিশ কর্মকর্তাকেই নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এবারও তেমনটিই হতে যাচ্ছে। তবে নতুন পুলিশ কমিশনার কে হচ্ছন সেটি ঠিক করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে ঢাকার নতুন পুলিশ কমিশনার নিয়ে খোদ পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন মহলে চলছে সরগরম আলোচনা। সেই আলোচনায় তিনজন অতিরিক্ত আইজিপির নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে। ওই তিন কর্মকর্তা হলেন সিআইডির প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) শেখ মারুফ হাসান ও পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এদিকে বর্তমান ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া আগামী সপ্তাহে অবসরে যাবেন। গত রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসেও নিজের অবসরে যাওয়ার কথা জানান তিনি। এ সময় তিনি তার এত বছর ধরে পরা পোশাকটিকে খুব মিস করবেন বলেও মন্তব্য করেন।
পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ অনুসারে ডিএমপি কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। পুলিশ সদর দফতর থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার সর্বচ্চো চারজন কর্মকর্তার নাম যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী তাদের মধ্যে পছন্দমতো একজনকে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি সপ্তাহে দেশে ফেরার পরপরই ডিএমপি কমিশনার পদে নিয়োগ চ‚ড়ান্ত করবেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, আলোচনায় থাকা তিনজন অতিরিক্ত আইজিপি সবাই সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। ওই তিনজনের মধ্যে সিআইডির প্রধান শফিকুল ইসলাম চাকরিতে সিনিয়র। তিনি সরকারের আস্থার কারণেই সিআইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে শেখ মারুফ হাসানকে গত ১৬ মে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদন্নোতি দিয়ে পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর পদে নিয়োগ দেয় সরকার। মারুফ হাসান সরকারের অত্যন্ত আস্থাভাজন একজন চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি কয়েক বছর আগে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। ডিএমপিতে সর্বশেষ কাজ করার অভিজ্ঞতা তারই বেশি। এ ছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের পল্টন-মতিঝিল তান্ডবকে নিয়ন্ত্রণে আনা, জঙ্গিবাদ দমন, রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধসহ বড় বড় ঘটনায় শেখ মারুফ হাসান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অন্যদিকে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও গত ১৬ মে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদন্নোতি দিয়ে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি পদে নিয়োগ দেয় সরকার। তার আগে তিনি পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেঞ্জ তথা ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সরকারের তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে ওই তিনজন অতিরিক্ত আইজিপির মধ্যে শেখ মারুফ হাসান বেশি এগিয়ে আছেন। খুলনার তেরোখাদার বাসিন্দা মারুফ হাসান একজন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচিত। এ ছাড়া সিনিয়র হিসেবে এবং নানা অভিজ্ঞতার কারণে সিআইডি প্রধান ও চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামও সরকারের আস্থার জায়গায় রয়েছেন। এ ছাড়া দক্ষ ও নিরপেক্ষ ইমেজের পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বাসিন্দা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও শোনা যাচ্ছে নতুন ডিএমপি কমিশনার হিসেবে। তবে এ সবই কেবল আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। মূলত প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন কাকে তিনি ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ দেবেন। যেহেতু বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর হাতে, তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দফতরের কোনো কর্মকর্তা এ নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেন না।
অবসরে যাচ্ছেন আছাদুজ্জামান মিয়া : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আগামী সপ্তাহে অবসরে যাচ্ছেন। ৩২ বছরের চাকরি জীবনে অনেক জেলায় কর্মরত ছিলেন তিনি। ফলে অবসরের সময় তিনি তার এত বছর ধরে পরা পোশাকটিকে খুব মিস করবেন বলেও মন্তব্য করেছেন। গত রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে একথা জানান। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছিল, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া অবসরে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই অবসরে যাওয়ার কথা জানালেন তিনি।
ফেসবুক লাইভের শেষের দিকে কমিশনার বলেন, ৩২ বছর পুলিশের চাকরি করেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে আমার প্রিয় ইউনিফর্মটা পরতে পারব না। এটা অনেক কষ্টের। আমি সম্মানিত নাগরিকদের কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে আমি যেসব জেলায় অনেকদিন চাকরি করেছি। তাদের যে ভালোবাসা, সমর্থন, সহযোগিতা পেয়েছি তাতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ। আমি চেষ্টা করেছি জনগণের জন্য কাজ করার, দেশের জন্য কাজ করার। এ সময় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনোভাবে ক্ষমতার দম্ভ নয়, কোনো হয়রানি নয়, বলপ্রয়োগের চেষ্টা নয় ভালো সেবা দিন। ভালোবাসা দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। আসুন নিপীড়িত, অবহেলিত, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াই। দুর্বৃত্তকে দমন করি কঠোর হাতে। দুর্নীতি থেকে দূরে এসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়েই পুলিশের সম্মান আরও উজ্জ্বল হবে।
১৯৬০ সালের ১৪ আগস্ট ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় জন্ম নেওয়া আছাদুজ্জামান মিয়া ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি ডিএমপি কমিশনার পদে যোগ দেন।