শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বেনাপোল : ফুল ফোটার আগেই ঝরে গেলো বেনাপোল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আল-ইমরান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৩২ বছর। ভেবেছিলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট লাঘবসহ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। এক অমাবশ্যার অন্ধকার কেড়ে নিলো সদ্য ছন্দ্র সাজানোর পথে টগবগে যুবক আল-ইমরানকে। শনিবার সকাল ৬ টার সময় সে খুলনা সিটি হাসপাতালে চিকিৎসারতবস্থায় শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ইমরান ছিলো ৩ ভাইয়ের মধ্যে মেজো। তার একটি বোন আছে। সে বেনাপোলের ভবেড়বেড় গ্রামের নজুরুল ইসলাম সাংবাদিকের ছেলে।
শনিবার জোহরের নামাজের পর বেনাপোল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের নামাজে জানাযা শেষে নিজ ভবেরবেড় গ্রামস্থ পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় নামাযে জানাযা হয়। পরে, গ্রামের গণকবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
ছোট বেলা থেকেই আল ইমরান দূরন্তপণা ও চঞ্চল প্রকৃতির হলেও নিয়মিত চালিয়ে গেছে তার লেখাপড়া। বেনাপোলের ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর নিউ মডেল কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি থেকে মাস্টার্স পাশ করে বেনাপোলে চলে আসে এবং স্থানীয় এমপি আলহাজ¦ শেখ আফিল উদ্দিন ও শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তারিকুল আলম তুহিনের হাত ধরে ছাত্রলীগের সংগঠণ গোছাতে থাকে। তারিকুল আলম তুহিনের দুরন্তপনায় আততায়ীরা তাকে গুম করে ফেললে সে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরদারের হাত ধরে বেনাপোলের ছাত্রলীগের সংগঠণকে করেছিলো গোছালো। আওয়ামীলীগের সকল সংগঠনের কাজে তার ছিলো বিরল ভূমিকা। সকল ফুলে যেমন মালা হয়না তেমনি এমন ছেলে যুগে যুগে জন্মগ্রহণ করেনা বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সাংসদ আলহাজ¦ শেখ আফিল উদ্দিন।
ছাত্রলীগ নেতা আল-ইমরানের মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে শোকাহত হয়েছেন। আলহাজ¦ শেখ আফিল উদ্দিন সন্তান স্নেহের ছাত্রলীগ নেতা আল-ইমরানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকাহত পরিবারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। বলেছেন, ফুল ফোটার আগেই ঝরে গেলো আল-ইমরান। সে বেঁচে থাকলে হয়তো ভবিষ্যতে আরো অনেক বড় মাপের নেতা হতে পারতো। তার মৃত্যুতে বেনাপোলের আওয়ামীলীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
নিহত আল-ইমরানের পিতা নজরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বেলা ২ টার সময় বাড়িতে বিশ্রামে ছিলো। এমন সময় ছাত্রলীগের এক কর্মী এসে ইমরানকে ডাক দেয়। এসময় সে ডাকে সাড়া দিয়ে বিছানা থেকে উঠার সময় ঘুরে পড়েযায় এবং মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। জরুরী ভিত্তিতে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নাভারনে নিয়েগেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলে। সেখানে স্থান সংকুলান হওয়ায় যশোর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে শারিরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে খুলনা সিটি হাসপাতালে নিলে শনিবার সকাল ৬টার সময় চিকিৎসারতবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপর তিনি আর কিছুই বলতে পারেননি। অবুঝ শিশুর মতো ঢুঁকরে ঢুঁকরে কাঁদতে থাকেন। আদরের সন্তান হারানোর বেদনায় ছটফট করছিলেন তিনি। বুকের খাঁচা ধরে যেনো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চাইছিলেন। পাশে কাঁদছিলেন মা’জননী। সন্তান হারানোর বেদনায় তিনি যেনো বোবা পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। অবাক বিশ্ময়ে তাকিয়ে ছিলো বেনাপোল পৌর ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগসহ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মাঝে মাঝে চোখের কোণ মুচছিলো। প্রিয় নেতার শেষ বিদায় জানাতে তাদের যেনো পাজরের হাড় ভেঙে যাচ্ছিলো।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা আল-ইমরানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের সাথে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, সহ সভাপতি আলহাজ¦ সালেহ আহমেদ মিন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যশোর জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদুজ্জামান, বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ¦ এনামুল হক মুকুল, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ নাসির উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মহাতাব উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক আকবার আলী, বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ বজলুর রহমান, শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য অহিদুজ্জামান অহিদ, সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার, সাধারণ সম্পাদক ইকবল হোসেন রাসেল, বেনাপোল পৌর সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন জোয়াদ্দার, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমানসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।