মোঃ মেহেদী হাসান, মণিরামপুর :
করোনা পরিস্থিতির কারণে গৃহবন্দি মানুষ খাদ্যের দাবিতে মণিরামপুরের রাস্তা নেমে এসেছেন নারী-পুরুষ। বিােভ দেখিয়েছেন খোদ উপজেলা পরিষদ চত্বরে।
দীর্ঘণ অপো করেও এসব নারী-পুরুষের খাদ্য সাহায্য পাননি। এক জনপ্রতিনিধি বলছেন, গরিবের এই ােভ যৌক্তিক। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, দ্রুতই খাদ্য পৌঁছে যাবে ওদের ঘরে।
ঘরে খাবার না থাকায় রোববার (৫ এপ্রিল) সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যপ্ত উপজেলার সুন্দলপুর, আগরহাটি, পাড়দিয়া, গাংড়া, মহাদেবপুর, দোলখোলা, মোহনপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে দুই শতাধিক মানুষ মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকেন। ত্রাণ পাওয়ার আশায় দীর্ঘণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।
জড়ো হওয়া নিরন্ন মানুষের মধ্যে উপজেলার শ্যামকুড় ইউপির আগরহাটি গ্রামের আখিরা বেগম বলেন, ‘সংসারে ৭-৮ জন লোক। ভিা করে সংসার চলতো। এখন কেউ ভিা দেয় না। না খেয়ে আছি। খবর পেয়ে এখানে আইছি। কিছুই পাইনি।’
সুন্দলপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পরিবহন শ্রমিক। একমাস ধরে আমাদের বলা হচ্ছে, গাড়ি বন্ধ রাখতে; খাবার নাকি বাড়ি পৌঁছে যাবে। আজ পর্যন্ত কিছুই পাইনি।’
ওই গ্রামের আরেক শ্রমিক হারুন বলেন, ‘সকালে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলাম। তারা আমাদের বলেছেন, উপজেলায় আসতে। এখানে আসার পর আমাদের খেলার মাঠে নিয়ে একঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে নাম লিখিয়েছে। পরে ইউএনও অফিসে তালা দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আমাদের কিছু দেয়নি।’
গাংড়া গ্রামের শাহিদা বলেন, ‘‘বাড়িতে সাতজন খাওয়ার লোক। এই পর্যন্ত কিছুই পাইনি। ঘরে এক কেজি চালও নেই। এখানে আসার পর ‘দেবে’ বলে আশা দিয়েছে। পরে না দিয়ে সবাই চলে গেছে।’’
প্রায় একই সুর ইউএনও অফিসের সামনে অবস্থান নেওয়া বাকিদেরও। ত্রাণ নিতে আসাদের অভিযোগ, তারা আসার পর এক পিকআপ খাদ্যদ্রব্য ইউএনও অফিসের সামনে আসে।
সেই খাদ্যদ্রব্য তাদের না দিয়ে খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই খাদ্যদ্রব্য যশোরের সিটি প্লাজার মালিক ইয়াকুব আলীর। তিনি আগের তালিকা ধরে সেগুলো বিতরণ করতে এসেছিলেন।
তবে, ফিরে যাওয়া মানুষদের বাড়ি বাড়ি খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম।
জানতে চাইলে শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘ওদের আন্দোলন সঠিক। আমার ইউনিয়নে পাঁচ হাজার ৭০০ লোক ভিজিডি পান। তাছাড়া আরো অনেকে এখন কাজ হারিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমি সরকারিভাবে ইতিমধ্যে প্রতি ওয়ার্ডে ২-৩টি করে মোট ৪০টি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছি। সোমবার সকালের মধ্যে আরো ১৪৫টা বিতরণ করব। এটা তো চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য।’
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, ইতিমধ্যে ১৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১৯ টন বিতরণ করা হবে। তাছাড়া আমরা হেল্প লাইন খুলেছি। যারা খাবার চেয়ে ফোন করছেন, তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। রোববার যারা উপজেলায় এসেছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। ধীরে ধীরে তাদের প্রত্যেককে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হবে।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, ‘যারা খাবারের দাবিতে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে এসেছেন তাদের ১২৭ জনের তালিকা আমি পেয়েছি। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তালিকা ধরে বাড়িবাড়ি খাবার পৌঁছে দেবো।’