নিজস্ব প্রতিবেদক:
যবিপ্রবি’র মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন মানবিক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক সমিতি বলছে, ‘বহিষ্কৃত ছাত্রের সাথে বিরোধের ঘটনাকে পুঁজি করে স্বনামধন্য শিক্ষককে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র’ করা হচ্ছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করে ইতোপূর্বে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিজানুর রহমান এই মামলাটি করেছেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে লাঞ্ছিত হওয়ায় মামলা করেছেন বলে দাবি মিজানুর রহমানের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৮ জুন যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মারধরের অভিযোগে মামলা করেন যবিপ্রবি নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিজানুর রহমান।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, রাজশাহীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেটর সরবরাহ করে। ওই প্রতিষ্ঠানের ১৮ লাখ টাকার (বিল) প্রকল্পের বিপরীতে সিকিউরিটি বাবদ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা জামানত রাখা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওই সিকিউরিটির টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিস্কৃত ছাত্র আজিজুল ইসলামকে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদ। টাকা দিতে না চাইলে তারা প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের উপর ক্ষুব্ধ হন।
এরই প্রেক্ষিতে গত ২৫ জুন শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে আজিজ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিস্কৃত এক ছাত্র প্রকৌশলী মিজানুরকে ডেকে ড. ইকবাল কবীর জাহিদের কাছে নিয়ে যান। সেখানে গেলে ড. ইকবাল কবীর জাহিদ একাডেমিক ভবনের পশ্চিম পাশে সিঁড়ির নিচে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মিজানুরের কানে থাপ্পড় মারেন। এরপর বহিস্কারকৃত ছাত্র আজিজও মিজানুরকে চড় থাপ্পড় মেরে লাঞ্ছিত করে বলে মামলায় উল্লেখ করেন।
এই মামলা দায়েরের পর গোটা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কয়েকজন শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা দাবি করছেন, মিজানুর রহমানের দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ায় এই মামলায় ‘অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদকে ফাঁসানো হয়েছে’।
যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, মামলার অভিযোগটি একেবারের ঠিক নয়। ঘটনার সময় মিজানুর ও আজিজের মধ্যকার কথা কাটাকাটি চলছিল। বিরোধ দেখে ড. ইকবাল কবীর জাহিদ এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে নিবৃত করেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারির সাউন্ড সিস্টেমের দুর্নীতির বিষয়ে একটি তদন্ত হয়েছিল। তদন্তে প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন ইকবাল কবীর জাহিদ। সে কারণে দেখে নেয়ার জন্য মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে।
ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ দাবি করেন, ঘটনা সাজানো বলেই মিজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অভিযোগ দিয়েছেন এবং আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছেন; তার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে এবং ড.ইকবাল কবির জাহিদের নামে যড়যন্ত্র মুলক মামলা হয়েছে যার কোন ভিত্তি নাই এটা সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা। একবার বলছেন, ২ নং আসামি তাকে ডেকে নিয়ে গেছেন; আবার বলছেন বহিরাগত লোক এসে ডেকে নিয়ে গেছে। সময়েরও ভিন্নতা রয়েছে। এছাড়া ঘটনার দু’তিন ঘণ্টা পর গিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে, তারা কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যবিপ্রবি’র ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিবুর রহমান জানান, ওই সময় তিনি ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী সিড়ি দিয়ে উঠছিলেন। তখন তিনি দেখেছেন, বহিষ্কৃত ছাত্র আজিজুলকে নিবৃত করে নিয়ে যাচ্ছেন ড. ইকবাল কবির জাহিদ। এরপর তিনি সেখান থেকে চলে যান। ওই সময় ‘মিজানুর রহমানকে ড. ইকবাল কবির মেরেছেন-এমন কোনো ঘটনা তিনি দেখেননি বা শোনেননি।’
যবিপ্রবি’র ফিজিওথেরাপি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. ফিরোজ কবীর জানান, ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি সাথে সাথেই সেখানে যান। ‘ইকবাল কবির জাহিদ মিজানুর রহমানকে মেরেছেন’-এমন কোনো কথা তিনি সেই সময় শোনেননি।
তিনি উল্লেখ করেন, ড. ইকবাল কবির জাহিদ একজন প্রথিতযশা শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণায়ও তিনি বরেণ্য। এছাড়া তিনি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থেকে কাজ করেন গত রমজান মাসে যশোরের বিভিন্ন এতিমখানা ও ওল্ডকেয়ার হোম বৃদ্ধাশ্রমের মা’দের জন্য শাড়ি ও ইফতার সামগ্রী বিতরন করেন।
তিনি যবিপ্রবি’র জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক। করোনাকালে এই জিনোম সেন্টারের অবদান সারাদেশের মানুষ জানেন। ফলে দুর্নীতি অনিয়ম ধরায় যদি এমন ষড়যন্ত্র ও হয়রানির শিকার হতে তা খুবই দুঃখজনক।
অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, মারপিটের কোনো ঘটনার সাথেই আমার নূন্যতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়ায় আমাকে ওই ঘটনার সাথে জড়ানো হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিকার না হলে তো আর কেউ অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস পাবে না।
তবে যবিপ্রবি নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি মারপিটের শিকার হয়েছেন বলেই মামলা করেছেন। আর গ্যালারির সাউন্ড সিস্টেমের অনিয়ম দুর্নীতির সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এদিকে, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলার’ প্রতিবাদে যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রোববার সকালে একাডেমিক ভবনের সামনে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন, যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি ড. সেলিনা আকতার, সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিবুর রহমান প্রমুখ।