যশোরের ঐতিয্য খেজুররস-গুড় হারিয়ে যেতে বসেছে!

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

যশোরের ঐতিয্য খেজুররস-গুড় হারিয়ে যেতে বসেছে!

 

শেখ গফ্ফার রহমান, একাত্তর নিউজ ২৪. ডেক্সঃ

এক সময় শীতকালের শুরু থেকে শেষ সময়ে খেজুর রস যশোর জেলার প্রায়স্থানেই পাওয়া যেত, এখন সে চিত্র পাল্টে গেছে, জেলা আর উপজেলার প্রায় সড়কই খেজুর গাছশূন্য।

তবে এখনও আমাদের যশোর জেলার কোনো কোনো এলাকায় কিছু কিছু খেজুর গাছ টিকে আছে।

যশোর-সদর উপজেলা গাইদ গাছি, খোলাডাংগা, জয়ান্তা, জগন্নাথপুর, বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা, মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর-কালিবাড়ি ও বাসুদেবপুর, কেশবপুর উপজেলার পাজিয়া, ডুঙ্গাঘাটা, গড়ভাঙ্গা, চৌগাছা উপজেলার সৌল, ঝিকরগাছা উপজেলার বাকড়া, অভয়নগর উপজেলার সড়কের দুই পাশে কিছু খেজুর গাছ এখনও দেখতে পাওয়া যায়।

স্থানীয় লোকজন জানান, এখানকার রাস্তার পাশের খেজুর গাছ বিলীনের অন্যতম কারণ ইট ভাটার জ্বালানী হিসাবে খেজুর গাছ কর্তন এবং রাস্তার পার্শে বিদ্যুতের লাইন নির্মাণে খেজুর গাছগুলো কাটা পড়ছে।

অন্যদিকে রাস্তার পাশে শিল্প প্রতিষ্ঠান আর বাসা-বাড়ি গড়ে উঠছে।  সব মিলিয়ে খেজুর গাছ নিধনে প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে।

এসব প্রতিযোগীতায় ঐতিহাসিক যশোরের খেজুর

গাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। পরিবেশ বাদীদের দাবী, খেজুর গাছ রক্ষায় সকলের-ই এগিয়ে আসা জরুরী।

এ ব্যাপারে যশোর জেলা জাতীয় কৃষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদকঃ মিজানুর রহমান বলেন, খেজুর গাছ সংকটের মুল কারন ইরি-বোরো ধানের আবাদ গুড় তৈরিতে জ্বালানী অপ্রতুল গাছীদের উৎপাদিত গুড়ের বাজার দর কম এবং দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের চিনি ও কেমিকেল রং দিয়ে তৈরি গুড় বাজারে সয়লাব করে দাম কমিয়ে দেওয়ার ফলে যশোর জেলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যের সুস্বাদু খেজুর রস ও গুড়। এক সময়ে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামগঞ্জের মানুষ গাছ তোলানো (গাছ কাটা) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন, কে কার আগে খেজুর গাছ কেটে খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারেন, প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন, এখন তা কমে ১৪% এ এসেছে।

তারা বলেন- খেজুর রসে তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েস ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নবান্নের সেরা উপহার ছিল। খেজুর রস দিয়ে অল্প সময়ে তৈরি করা হতো পাটালি গুড়, পিঠা-মিষ্টি সহ নানা রকমের মজার মজার খাবার সামগ্রী।

সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস। খেজুর গাছ কাটার সাথে নিয়োজিতদের যশোর অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় গাছী।

এই দুই কৃষক নেতা বলেন, ‘এক শ্রেণীর লোকেরা ইটভাটার জ্বালানী কাজে নির্বিচারে ব্যবহার করায় খেজুর গাছের সংকট দেখা দেয়।

ফলে যশোর অঞ্চলে খেজুর রস ও গুড় আজ দুষ্পাপ্য হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত গাছী খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন।

১০/১২ বছর আগেও এ অবস্থাটি দেখতে পাওয়া

যেতো, এখন সে দৃশ্যটি এখন আর চোখে পড়ে না।

খেজুর গাছের সংকট দেখা দেওয়ায় আগের মতো

আর রস পাওয়া যাচ্ছে না।

ফলে দিনে দিনে খেজুর রস খাওয়া থেকে বঞ্চিত

হচ্ছে শহর ও গ্রামগঞ্জের মানুষ।

কয়েক বছর আগেও শীত মৌসুমে খেজুর রসের তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েস সহ সুস্বাদু নবান্নের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে উৎসাহ ও আনন্দের মধ্যে শীত এবং নবান্নকে বরণ করত এ অঞ্চলের মানুষ।

এখন খেজুর রস না পাওয়ায় সেই চিরন্তন আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা, এর এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খেজুর গাছ ও রস-গুড় চিনবেনা তারা।

মানুষ শীত মৌসুমে অতিথিদের রসের তৈরি পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করানোর প্রচলন এখন ভুলতে বসেছেন। গাছী আমজেদ আলী বলেন, ‘গ্রামে এখন খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। নেশার বসে সন্ধান চালিয়ে বের করে গাছে প্রক্রিয়াজাত করে খেজুর রস সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।

যদিও কোথায় গাছের সন্ধান পাই, গাছের মালিককে

সপ্তাহে তিন দিন রস দিয়ে বাকি চার দিন আমি নিয়ে বিক্রি করে যে টাকা পাই তাতে পরিশ্রমের মূল্য হয় না। মৌসুমি রসের স্বাদ পেতে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা ছাড়তে পারছি না।

এ ব্যাপারে যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বসুন্দিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী স্বপন কুমার ও রবিন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন কৃষককে নতুন করে খেজুর চারা দিয়েছি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কিন্তু তারা তা নিতে ততটা অাগ্রহী হয়না। শীতের সকালে খেজুর রস খাওয়ার স্বাদই আলাদা। তাই এ খেজুর গাছ রক্ষা করা দায়িত্ব সকলের।

Please follow and like us: