জি এম অভি : যশোর সদর উপজেলায় ২ শতাধিক সেলুন রয়েছে। এসব সেলুনে কাজ করেন প্রায় ৬ শতাধিক নরসুন্দর। করোনাভাইরাসের কারণে তারা এখন কর্মহীন। বেশ অর্থকষ্টে জীবন কাটছে তাদের। সমাজে যেন তারা বড়ই উপেক্ষিত, তাদের দেখার কেউ নেই। তবে দুয়েকটি সেলুনে শাটার ফেলে কাজ করলেও তাতে চুল কাটতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা। এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
সেলুনগুলোতে নরসুন্দর আর খদ্দেরের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলেও যশোরের পাড়া-মহল্লায় দুএকটি সেলুন খোলা আছে। তবে কোনো খদ্দের নেই। ফলে অলস সময় পার করছেন নরসুন্দররা।
কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ ছুটিতে অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই বেশিরভাগ নরসুন্দর যশোরের বাইরে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। কিন্তু যারা শহরে বাস করেন তারাও কর্মহীন। ফলে অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে নরসুন্দরদের।
বুধবার (২৪ জুন) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সেলুনের নরসুন্দরদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
যশোরের দড়াটানা, উপশহর বি-ব্লক,মনিহার চত্তর, কাজীপাড়া ও হাইকোর্ট মোড় এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেলুনগুলো বন্ধ। এছাড়া এসব এলাকার অলিগলিতে কয়েকটি সেলুনের ঝাঁপ অর্ধেক খোলা দেখা যায়। তবে সাধারণ সময়ের ৫ ভাগ খদ্দেরও আসছেন না।
শহরের চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ডের দেশ বন্ধু হেয়ার ড্রেসারের মালিক ইন্দ্রজিত কুমার রায় ও তার ভাই স্বরজিত কুমার রায় একই সেলুনে প্রায় ৩০ বছর কাজ করছেন । ইন্দ্রজিত দৈনিক যশোরকে জানায়, আমাদের পরিবারে ৭ জন মানুষ বৃদ্ধ মা অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পরে আছেন অনেক বছর । মায়ের প্রতিমাসে ওষুধ লাগে প্রায় ৫ হাজার টাকার । পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক ছিল তখন সমস্যা ছিলনা কাজ করে মোটামুটি ভাবে চলছিলাম । কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে তিনমাস যাবত খুবই অসহায় জিবন যাপন করছি ।
সেলুন ব্যবসায়ী স্বরজিত জানায়, আমি ৩০ বছর এই পেশায় আছি কখনো এইরকমের পরিস্থিতির শিকার হয়নি । প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত আয় হয়েছে আর বর্তমানে ৩০ থেকে সর্বচ্ছ ৭০ টাকার কাজ করছি যা দোকানের খরচ ওঠেনা আর পবিরার চলবে কিভাবে । ধার দেনা করে কতক্ষন চলা যায় ।
উপশহর বি-ব্লকের সেলুন ব্যবসায়ি ওয়াসিম জানায় , এতদিন পরে এখন আমরা বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে পারি কিন্তু করোনার ভয়ে কাস্টমার আসছেনা । স্বাভাবিক পরিবেশে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ শ টাকার কাজ করতাম এখন শুন্য পকেটে বাড়ি ফিরছি । খুবই অসহায় অবস্থায় আছি যা বলার মত না। একদম অলস সময় পার করছি। আমার কাছে যা টাকা ছিল তা দিয়ে পরিবার নিয়ে কয়েকদিন চলেছি। কী করবো বুঝতে পারছি না। ধার-কর্জ করে চলা ছাড়া আর কোনো পথও দেখছি না।
শহরের বেগম মিলের পাশে জয়শ্রি সেলুনের মালিক বিকাশ জানায় তিন মাস পরে দোকান খুলেছি কোন কাজ নাই । এমনকি কোন রকম মানবিক সহায়তাও পাইনি ।
আরিফপুর মোড়ের অতশী সেলুনের মালিক নয়ন সরকার দৈনিক যশোরকে জানায়, জিবনে কখনো এমন কষ্ট পাইনি আমাদের জীবিকা নির্বাহ হয় সেলুন ব্যবসার মধ্যে দিয়ে । করোনা ভাইরাসের কারনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে কাস্টমার আসেনা । এমনকি এই মহামারিকালে সরকারিভাবেও আমরা কোন সহায়তা পাইনি ।
যশোর সদর উপজেলা সেলুন মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক গোপাল চন্দ্র রায় ও সংগঠনের উপদেষ্টা নয়ন সরকার দৈনিক যশোরকে বলেন, যশোর সদর উপজেলায় ২শ সেলুনের প্রায় ৬শ মালিক কর্মচারি বর্তমানে বেকার অবস্থায় রয়েছে । কাঁচাবাজার, মুদি দোকান ও আড়ালে অনেক দোকান খুলে ব্যবসা করলেও সেলুন খোলা যায়নি। কোনোপ্রকার আয় না থাকায় তারা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সরকারী ত্রাণ ভাগ্যে জুটছে না। আমরা সেলুন ব্যবসায়িরা মানবিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছি যশোরের জেলা প্রসাশক বরাবর, পুলিশ সুপার বরাবর, যশোর পৌরসভা ও সদরের এম পি মহাদয় বরাবর । অবেদন করেছি অনেকদিন হয়েছে কিন্তু আমরা সেলুন ব্যবসায়িরা আজ পর্যন্ত কিছুই পাইনি ।
তারা আরো জানান, আমরা সেলুনের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ পারিনা । এজন্য ইচ্ছে থাকলেও এ পেশা ছেড়ে যেতে পারছিনা । আমাদের প্রধানমন্ত্রী মহামারি করোনাকালে বিভিন্ন সংগঠন ও জনগনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন । তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমরা আমাদের পরিবারপরিজন নিয়ে খুবই অসহায় জিবনযাপন করছি আপনি আমাদের বাাঁচান।