একাত্তর নিউজ যশোর অফিস:
বান্ধবীর সাথে গোপন সম্পর্কের’ ভিডিও ফেরত না দেয়ায় বন্ধু পল্লব দত্তকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে মারুফ ওরফে ইশান। রোববার যশোরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা বসু তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। আসামি মারুফ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে।
অপরদিকে এ মামলার অপর দুই আসামিকে একইদিন সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। আসামিরা হলেন, সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে আলিফ আহম্মেদ অপূর্ব এবং আজিজুর রহমানের স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা ওরফে সাফিয়া সুলতানা।
বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল গোলাম রব্বানী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিব হাসান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
অপূর্ব জানিয়েছে, সে তার নানা বাড়িতে থাকে। তার নানা ও নানী শিক্ষকতা করেন। দিনের বেলায় অধিকাংশ সময় তার নানা ও নানী বাড়িতে থাকেন না। অপর আসামি ইশান ও অপুর্ব একই সাথেসিঙ্গিয়া কলেজে লেখাপড়া করে এবং পল্লব যশোর সিটিি কলেজে পড়ত ও এক সাথে কোচিিং করত কিন্তু ইশানের একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে ইশান তার বান্ধবীকে সাথে নিয়ে অপূর্বের নানা বাড়ি যায়। নানা ও নানী বাড়িতে না থাকায় বাড়িটি ফাঁকা থাকে। সে কারণে ইশান গত ৮ অক্টোবরে তার বান্ধবীকে নিয়ে অপূর্বের নানা বাড়িতে যায়। সেখানে তারা অনৈতিক কার্যকলাপ করে। তাদের ওই অনৈতিক কার্যকলাপটি তার আরেক বন্ধু পল্লব মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে গত ১৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পল্লবকে তার ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনটি নিয়ে অপূর্বের নানা বাড়ি আসতে বলে। পল্লব আসার পরে অপূর্বকে সিগারেট কিনতে বাজারে পাঠায় ইশান। এরই মধ্যে পল্লবের কাছে ইশান ভিডিওটি ফেরৎ চায়। কিন্তু পল্লব ফেরৎ দিতে অস্বীকার করে। এতে দুইজনের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে অপূর্বের ঘরে থাকা কাগজ কাটা চাকু দিয়ে পল্লবের বুকে আঘাত করে। এরপর ইশানের কথামত অপূর্ব পল্লবের পা চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পরে পল্লব মারা যায়। পরে তার লাশটি ওই ঘরের মধ্যে একটি বস্তায় করে মাটিচাপা দিয়ে রাখে।
গত ৯ নভেম্বর দুপুরে পুলিশ অপূর্বকে আটক করে। তার কাছ থেকে পল্লবের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর অপূর্বকে জিজ্ঞাসাবাদে পল্লবকে হত্যার কথা স্বীকার করে। এছাড়া মূল হত্যাকারী বন্ধু ইশানের নাম প্রকাশ করে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর সকালে প্রতিদিনের ন্যায় পল্লব কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যায় বাড়িতে না ফেরায় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা। এব্যাপারে পল্লবের পিতা বিকাশ চন্দ্র দত্ত বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ বিভিন্ন যান্ত্রিক উপায়ে প্রথমে অপূর্বকে আটকের পর পল্লবের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপটি উদ্ধার করে। এরপর অপূর্বের দেখানো মতে ৯ নভেম্বর রাতে পল্লবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় পল্লবের পিতা বাদী হয়ে অপূর্ব, ইশান ও অপূর্বের নানী সাবিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ অপূর্ব, ইশান ও অপূর্বের নানীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। রোববার আটক অপূর্ব হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেয়। আর ইশান ও সাবিয়া সুলতানাকে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করে।