একাত্তর নিউজ ডেস্ক : শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ অনেক সময় গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তবে সেই গুনাহ মাফের জন্য অনেক উপায়ও বলে দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই বান্দা পেতে পারে গুনাহমাফির এসব সুযোগ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার : ৫৩)। নিচে গুনাহ মাফের কিছু আমলের কথা তুলে ধরা হলো।
তওবা : তওবা করলে বান্দা গুনাহ থেকে মাফ পেতে পারেন। অনেক বড় পাপীও তওবার মাধ্যমে গুনাহমুক্ত হয়ে যেতে পারেন। হাদিসে এসেছে, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী ব্যক্তি গুনাহমুক্ত ব্যক্তির মতো।’ (ইবনে মাজাহ : ৪২৫০)। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা রাতে তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। আর দিনে তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। এভাবে তার অবারিত ক্ষমা চলতে থাকবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া পর্যন্ত।’ (মুসলিম : ২৭৫৯)
অজু : অজুর মাধ্যমে কেবল বান্দার শরীরের ধুলো-ময়লা দূর হয় না। দিনরাতের কৃত গুনাহও বিদূরিত হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম অজু করে, চেহারা ধোয়ার সময় পানির ফোঁটার সঙ্গে চোখের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। যখন হাত ধোয় তখন হাতের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। যখন পা ধোয় তখন পানির ফোঁটার সঙ্গে পায়ের দ্বারা কৃত গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। এভাবে বান্দা গুনাহ থেকে একেবারে পুতঃপবিত্র হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ২৪৪)
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ : যে ব্যক্তি গুরুত্বের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে তার গুনাহ থাকতে পারে না। তবু বান্দার কোনো গুনাহ হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালা নামাজের উসিলায় তার গুনাহ মাফ করে দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কী মনে হয়! কারও বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজি তখন বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এমনই। এর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার পাপসমূহ মিটিয়ে দেন।’ (বুখারি : ৫২৮; মুসলিম : ৬৬৭)
নামাজের জন্য মসজিদে গমন : নামাজের জন্য মসজিদের দিকে গেলে কদমে কদমে গুনাহ মাফ। জামাতের নামাজ আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক প্রিয়। ফলে জামাতের নামাজের জন্য যে কদম আগে বাড়ে তাও আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয়। জামাতে নামাজের জন্য সামনের দিকে বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জামাতের নামাজ ঘরের বা বাজারের নামাজ থেকে পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ, বান্দা যখন উত্তমরূপে অজু করে এবং একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তখন প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গুনাহ মাফ করে দেন।’ (বুখারি : ৬৪৭)
বিপদে ধৈর্য ধারণ : মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরনের বিপদ আসে। বিপদ যেমনই আসুক, মুমিন যদি বিপদে ধৈর্য ধারণ করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময় দান করেন এবং এর কারণে গুনাহ মাফ করেন। হাদিসে এসেছে, ‘একবার নবীজি (সা.) প্রচÐ জ্বরে কাঁপছিলেন। এমন সময় হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবীজির কাছে হাজির হলেন। একপর্যায়ে নবীজি (সা.) বললেন, মুমিন যখন কোনো বিপদ বা কষ্টে নিপতিত হয় তখন আল্লাহ এর বিনিময়ে তার গুনাহগুলো মাফ করে দেন যেমন শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ে।’ (মুসলিম : ৫৬৪৭)। আরেকটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিন পুরুষ বা মুমিন নারী বিপদাক্রান্ত হতে থাকে; সে বিপদে কখনও আক্রান্ত হয় শরীর, কখনও সম্পদ, কখনও সন্তান-সন্ততি। এসব বিপদে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করতে থাকেন। একপর্যায়ে সে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৭৮৫৯)
মুসাফাহা : এক মুসলিমের সঙ্গে আরেক মুসলিমের সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের পর প্রথম কাজই হলো মুসাফাহা। এটা মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতি। দুই হাতের মিলন হৃদয়কেও ছুঁয়ে যায়, জুড়ে দেয় হৃদয়ের বন্ধন, ঘুচে যায় দূরত্ব।
এক মুমিন আরেক মুমিনের এমনই কাছাকাছি থাকবে, অন্তরঙ্গ থাকবেÑ এমনটিই আল্লাহ চান। ফলে মুসাফাহা আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দের আমল। এর কারণে আল্লাহ খুশি হন এবং তাদেরকে মাফ করে দেন। হাদিসে এসেছে, হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাক্ষাৎকালে দুজন মুসলিম যখন মুসাফাহা করে তখন তারা পৃথক হওয়ার আগেই তাদেরকে মাফ করে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি : ২৭২৭; আবু দাউদ : ৫২১২)
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক
সময়ের অালো