শেখ গফ্ফার রহমান,একাত্তর প্রতিনিধিঃ
গতমাসে স্থিতিশীল থাকলেও হঠাৎ করেই রাজধানী সহ দেশের বাজারগুলোতে পিয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
গত কয়েক দিনে খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে অস্বাভাবিকভাবে দ্বিগুনের বেশি দাম বেড়েছে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।
খুচরা বাজারে এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির তেমন কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন পাইকারী বিক্রেতারা।
রাজধানীর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্ষা ও উৎপাদন সল্পতা কারন সামনে এনে অসাধু ব্যবসায়ীরা পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সরবরাহ ও আমদানি মূল্য কম থাকার পরও বাড়তি মুনাফা করার জন্য দাম বাড়িয়েছেন চক্রটি।
অন্যদিকে, ভোক্তারা মনে করেন, বাজার পর্যবেক্ষণ না থাকার কারণে এরকম দাম বেড়েছে।
এখনি বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার না করা গেলে পিয়াজ-রসুনসহ অন্য মসলারও দাম বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান তারা।
দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন মৌসুমে পিয়াজ তোলার সময় বৃষ্টি ছিল।
এতে নষ্ট হওয়ার ভয়ে দেশি পিয়াজ আগাম বেশি বিক্রি হয়ে গেছে।
ফলে, আড়তগুলোতে এখন দেশী পিয়াজ কম সরবরাহ হচ্ছে।
তাছাড়া ভারতীয় বাজারে পিয়াজের দাম বৃদ্ধির কথা বলেন তারা।
দেশের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখালেও পিয়াজ কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীদের ওপর।
বাজারে গতমাসে দাম অপরিবর্তিত থাকলেও চলতি মাসে হঠাৎ করে পিয়াজের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিপাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকায়। গত মাসে প্রতিকেজির দাম ছিল ২৫ থেকে ২৭ টাকা এবং পাল্লা ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
কিন্তু চলতি মাস থেকে রাজধানীর খুচরা দোকান ও মুদি দোকানগুলোয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে, শুক্রবারেও যা ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি।
বাজার ঘুরে ত্রেতা সাধারনের সংগে আলাপ করলে তাহারা রাগান্বিত স্বরেই বললেন, গত শুক্রবারও যে পিয়াজ কিনেছি ৫৫-৬০ টাকা কেজি, তা এখন হয়ে গেল ৮০ টাকা।
এটা কি মগের মুল্লুক নাকি! পিয়াজ ছাড়া রান্না চলে না তো, তাই জেনেশুনে এমন সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়। এটা সাধারণ ক্রেতাদের ওপর অত্যাচার ছাড়া কিছু না।
যশোরের বড় বাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারতীয় পিয়াজের আমদানি খরচ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পিয়াজ সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে।
তাই পাইকারী বাজারে পিয়াজের দাম বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
আরেক পিয়াজের মাঠপর্যয়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, বৃষ্টির কারণে গত কয়েক দিনে পাইকারি বাজারে পিয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে কেজিপ্রতি পিয়াজের দাম পড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এর সঙ্গে খরচ যোগ করে আমাদের ৭৫ থেকে ৮০টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আগে দিনে ভারত থেকে ২০০ পিয়াজের গাড়ি ৪টি স্থল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করতো।
কিন্তু এখন সেখানে ১০০ থেকে ১২০টি গাড়ি ঢুকছে বাংলাদেশে।
আমদানি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে বলে জানান তিনি।
খুচরা বাজারে দেখা গেছে, মানভেদে দেশি পিয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা। গতকাল রোববার থেকে এই দামে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
তবে গত শুক্রবার প্রতি কেজি ভালো মানের দেশি পিয়াজ বিক্রি হয় ৫৫-৬০ টাকা। অর্থাৎ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম বেড়েছে ৪০-৫০টাকা। রোববার পাইকারিতে দাম বাড়ার প্রভাবে ওই দিন থেকেই খুচরা বাজারে পিয়াজের দামে বড় ধরনের উত্থান হলেও, মঙ্গলবার পাইকারিতে দাম কমার প্রভাব এখনও খুচরা বাজারে পড়েনি। খুচরা বাজারে এখনও বাড়তি দামেই পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
খুলনার এক ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টির কারণে গত কয়েকদিনে পিয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়।
ওই সময় আমাদের প্রতি মণ পিয়াজ কেনা পড়ে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ে ৬৪-৭০ টাকা।
এর সঙ্গে খরচ যোগ করে আমাদের ৮০ টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তবে পাইকারি বাজারে পিয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি মণ কেনা পড়ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।
অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৫৫-৬০ টাকা। এই পিয়াজ আমরা ৬০-৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
এ হিসাবে এখন পিয়াজের দাম প্রতি কেজিতে কমেছে ১০ টাকা কিন্তু খুচরা বাজারে চিত্র ঠিক উল্টো।
ক্রেতাসাধারন এব্যপারে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের শুভদৃষ্টি কামনা করেছেন।