একাত্তর যশোর অফিস :
যশোরের শার্শায় গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তিন জনের নাম উল্লেখ ও একজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ধর্ষণের ঘটনায় যাকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে ওই নারী দাবি করেছিলেন সেই এসআই খায়রুলকেই আসামি করা হয়নি। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গণধর্ষণের শিকার ওই নারী বুধবার সকালে বাদী হয়ে শার্শা থানায় এ মামলা দায়ের করেন। তবে ধর্ষিতা নারী প্রথমে শার্শার গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুলসহ তার সোর্সের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- শার্শার লক্ষণপুর গ্রামের মজিদের ছেলে কাদের, মাজেদের ছেলে লতিফ ও চটকাপোতা গ্রামের হামিজ উদ্দীনের ছেলে কামরুল।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহউদ্দিন শিকদার বলেন, এ মামলায় অজ্ঞাত আসামিকে গ্রেফতারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। অজ্ঞাত আসামি সে যেই হোক না কেন, তাকে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধান অভিযুক্ত গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই খায়রুলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিকটিমের সামনে গত রাতে এসআই খায়রুলকে কয়েক দফা আনা হয়। কিন্তু তিনি খায়রুলকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেননি।’
ভিকটিম ভয়ে প্রধান অভিযুক্তের নাম বলতে পারছেন না কিংবা তাকে চাপ দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাকে কোনও প্রকার ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতে যখন তাকে অভিযুক্তের সামনে আনা হয়, তখন তার চোখে মুখে কোনও আতঙ্ক বা ভয়ভীতি ছিল না।’ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন কিন্তু এসআই খায়রুলকে কেন প্রত্যাহার করা হয়েছে জানতে চাইলে এডিশনাল এসপি সালাহউদ্দিন শিকদার বলেন, ‘যেহেতু এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্তের যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেকারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি দোষী, সেকারণে প্রত্যাহার হয়েছে এমনটি নয়। তাছাড়া যেহেতু তার নামে অভিযোগ করা হয়েছে,তাই কর্মস্থলে তিনি কাজ করতে অস্বস্থি বোধ করতে পারেন।’ ঘটনা তদন্তে ৩ সেপ্টেম্বর এডিশনাল এসপি সালাহউদ্দিন শিকদারকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী তিনদিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে ধর্ষণের শিকার ওই নারী জানান, গত ২৫ আগস্ট রাতে শার্শার লক্ষণপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে তার স্বামী আশাদুজ্জামানকে মাদক ব্যবসার অভিযোগে তুলে নিয়ে যান এসআই খায়রুল। পরদিন তার কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তাকে আদালতে চালান দেন।
এরপর সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ২টার দিকে এসআই খায়রুল ও তার কয়েকজন সোর্স ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। পরে স্বামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে এসআই খায়রুল ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এ বিষয়টি নিয়ে খায়রুলের সঙ্গে ওই নারীর কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে খায়রুল ও তার সোর্স তাকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি কাউকে জানালে তাকেও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়।
পরে, মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ধর্ষিতা নারী যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গেলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা জানতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ধর্ষিতা নারী ও অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।