শেখ গফ্ফার রহমান, একাত্তর নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম ডেক্সঃ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরে তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তার পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি জমেছে গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজের লক গেটে। এ কারণে সব গেটই খুলে দিয়েছে ভারত। জানা গেছে, পানির চাপ থেকে ব্যারেজকে রক্ষা করতে ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও ভুটানে ভারী বৃষ্টির কারণে গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজের লক গেটে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ কারণে সব গেটই খুলে দেয় ভারত। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের
তিস্তার বুকে চর দেখা যাচ্ছিল। হাঁটুও ভিজত না পানিতে। তবে এখন পানিতে পরিপূর্ণ তিস্তা। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে আরো বাড়বে তিস্তার পানি। এদিকে, পানি বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে, এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বেড়ে যাওয়ায় তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এছাড়া পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। বিশেষ করে গোকুণ্ডা এলাকায় তিস্তার ভাঙ্গন প্রবল আকার ধারণ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গত বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নীলফামারী জেলার ডিমলার ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তার পানি বিপদসীমার দশমিক ০৭ মিটার ওপরে ওঠে আসে।
শেরপুরের নালিতাবাড়ির নাকুগাঁও পয়েন্টে মেঘালয় থেকে নেমে আসা ভোগাই নদীর পানি দশমিক ২০ মিটার ওপরে ওঠে আসে। আর নেত্রকোণার পূর্ব ধলার জারিয়াজাঞ্জাইল পয়েন্টের কংশের পানি বিপদসীমার দশমিক ৫৫ মিটার ওপরে ওঠে আসে।
পাউবো জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল বাড়ছে যা, আগামী কয়েক দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে যা বাড়তে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বাড়ছে যা, আগামী শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া সংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী শনিবার নাগাদ দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল,
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম,আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশের স্থানগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এর ফলে এই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, নিতাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
পাউবোর পর্যবেক্ষণাধীন বিভিন্ন নদ-নদীর ১০১টি পয়েন্টের মধ্যে বুধবার ৭৫টি পয়েন্টের পানির সমতল বেড়েছে। কমেছে ২২টি পয়েন্টের পানির সমতল। অপরিবর্তিত আছে তিনটির পয়েন্টের পানির সমতল আর একটি পয়েন্টের এখনো তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়নি।
এদিকে শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশত গ্রাম। টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোনায়। সুনামগঞ্জে তলিয়ে গেছে সড়ক। টানা বৃষ্টি আর ঢল মেঘালয়ের পাহাড় ছাড়িয়ে সুনামগঞ্জের লোকালয়ে। বেড়েছে সুরমা, যাদুকাটা নদীর পানি।
প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। এমন অবস্থায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।একই অবস্থা শেরপুরের ঝিনাইগাতী, সদর ও নালিতাবাড়ি উপজেলার। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মহারসী, সোমেশ্বরী ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়েছে। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে।
বৃষ্টির কারণে নেত্রকোনায় কংশ, মগড়াসহ বিভিন্ন নদীর পানি বেড়েছে। সিরাজগঞ্জে ভাঙনকবলে থাকা যমুনা নদীর ১০০ মিটার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।এদিকে ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও ভুটানে ভারী বৃষ্টির কারণে গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজের কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে করে উত্তরাঞ্চলেও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।