চা শ্রমিকদের ৫০টাকা বৃদ্ধি করে মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

 

শেখ গফ্ফার রহমান, স্টাফ রিপোর্টারঃ

চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে। সেখান থেকে আপনারা উপার্জন করেন, তারাও করে। করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ভালো-মন্দও তো আমাদের দেখতে হবে।’

 

চা বাগানের খেটে খাওয়া শ্রমিকদের ভালো-মন্দের দিকে নজর দিতে বাগান মালিকদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে শনিবার বিকেলে বাগান মালিকদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে এ কথা বলেন সরকার প্রধান। বৈঠকে ১৩ জন বাগান মালিক অংশ নেন।

 

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে। সেখান থেকে আপনারা মালিকরা উপার্জন করেন, তারাও করে। কাজেই তাদের ভালো-মন্দ দেখা তো সবারই দায়িত্ব।

 

‘করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ভালো-মন্দও তো আমাদের দেখতে হবে।’

 

মালিকদের সঙ্গে হওয়া এই বৈঠকেই চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেন সরকারপ্রধান। একইসঙ্গে তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধির নির্দেশ দেন তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এই শ্রমিকদের কিন্তু নাগরিকত্বও ছিল না। কারণ ব্রিটিশরা তাদের বাইরে থেকে নিয়ে এসে রীতিমতো স্লেভারি করাতো। দাসত্বগিরিই করতে হতো তাদেরকে।

 

‘বঙ্গবন্ধু যখন চেয়ারম্যান হলেন তখন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হলো। কিছু সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হচ্ছিলো। সেই সূত্রে তাদের সঙ্গে আমার সব সময়ই একটি সম্পর্ক ছিল, যোগাযোগও ছিল। তারা এ কথাটা সবসময় মনে রাখে।’

 

সরকার প্রধান বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন আমি সরকারে আসি তখন যে প্রস্তাবগুলো আমার কাছে এসেছিল তার অনেকগুলোই তখন করে দিয়েছিলাম। চা শিল্প আমাদের দেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

‘এক সময় এটা আমাদের দেশের একটি বড় অর্থকরি ফসল ছিল, যেটা আমরা রপ্তানি করে অর্থ উপার্জন করতাম। এখন দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা আবার একটু ভালো হয়েছে। চা’য়ের চাহিদা আমাদের দেশেও কিন্তু অনেক বেড়ে গেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘আমরা উৎপাদন বাড়ানোরও চেষ্টা করেছি। নতুন নতুন চা বাগান করেছি। পঞ্চগড়ে কখনোই চা বাগান ছিলো না। এটা আমিই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেই পঞ্চগড় থেকে চা বাগান এখন ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত এসে গেছে। আবার লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামেও অনেকে ছোট ছোট করে শুরু করছে। আগে তো শুধু চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগেই আমাদের চা বাগান ছিল।’

 

চা বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক শেষে গণভবনের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে বৈঠকের বিস্তারিত জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে বসেছেন। তাদের সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে, সব কিছু বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের দৈনিক মজরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন।

 

‘এর সাথে তাদের (শ্রমিকদের) বোনাস, বার্ষিক ঝুঁকিভাতা, উৎসব-ছুটি ভাতা এবং অসুস্থতা জনিত ছুটিও আনুপাতিক হারে বাড়বে।’

 

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের ভবিষ্য তহবিলে মালিক পক্ষ যে টাকা দেয় সেটিও আনুপাতিক হারে বাড়বে। রেশনের মাধ্যমে মালিক পক্ষ যে খাদ্যপণ্য দেয় সেগুলো খুব কম দামে দেয়া হয়। এর ব্যয়ভার মালিকপক্ষই বহন করবে। শ্রমিকদের রেশন, চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা দেয়া হয়। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এতে একজন শ্রমিকের জন্য দৈনিক সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ টাকা মালিক পক্ষের খরচ হয়।

 

মুখ্য সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের সবাইকে কাজে যোগ দিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন আগামীকাল থেকেই যেন তারা কাজে যোগ দেন। কারণ তাদের পক্ষ হয়েই প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি খুব শিগগির ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের সঙ্গেও কথা বলবেন।

 

শনিবার চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

 

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বিকেল ৪টার পরপরই গণভবনে এ বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। ১৩ জন বাগানমালিক এ বৈঠকে অংশ নেন।

 

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর আজকের সিদ্ধান্তের আশায় বুক বাঁধেছিলো। তাদের প্রত্যাশা ছিলো, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান দেবেন এবং এতে তাদের কাজে ফেরার পরিবেশ তৈরি হবে।

 

জেলার ২৪টি চা বাগানে ১৮ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। প্রশাসন ও মালিকপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরও বিষয়টি সমাধান হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী ও বাগান মালিকদের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন চা শ্রমিকরা।

 

চা শ্রমিকরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী একটি করে বৈঠকের বিস্তারিত জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে বসেছেন। তাদের সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে, সব কিছু বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের দৈনিক মজরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন।

 

‘এর সাথে তাদের (শ্রমিকদের) বোনাস, বার্ষিক ঝুঁকিভাতা, উৎসব-ছুটি ভাতা এবং অসুস্থতা জনিত ছুটিও আনুপাতিক হারে বাড়বে।’

 

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের ভবিষ্য তহবিলে মালিক পক্ষ যে টাকা দেয় সেটিও আনুপাতিক হারে বাড়বে। রেশনের মাধ্যমে মালিক পক্ষ যে খাদ্যপণ্য দেয় সেগুলো খুব কম দামে দেয়া হয়। এর ব্যয়ভার মালিকপক্ষই বহন করবে। শ্রমিকদের রেশন, চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা দেয়া হয়। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এতে একজন শ্রমিকের জন্য দৈনিক সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ টাকা মালিক পক্ষের খরচ হয়।

 

মুখ্য সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের সবাইকে কাজে যোগ দিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন আগামীকাল থেকেই যেন তারা কাজে যোগ দেন। কারণ তাদের পক্ষ হয়েই প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি খুব শিগগির ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের সঙ্গেও কথা বলবেন।

 

শনিবার চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

 

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বিকেল ৪টার পরপরই গণভবনে এ বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। ১৩ জন বাগানমালিক এ বৈঠকে অংশ নেন।

 

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর আজকের সিদ্ধান্তের আশায় বুক বাঁধেছিলো। তাদের প্রত্যাশা ছিলো, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান দেবেন এবং এতে তাদের কাজে ফেরার পরিবেশ তৈরি হবে।

 

জেলার ২৪টি চা বাগানে ১৮ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। প্রশাসন ও মালিকপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরও বিষয়টি সমাধান হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী ও বাগান মালিকদের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন চা শ্রমিকরা।

 

চা শ্রমিকরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী একটি সিদ্ধান্ত নেবেন, তবে তিনি যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন, সেটাই মেনে নিয়ে কাজে ফিরবেন তারা।

 

বৈঠকের বিষয়ে চান্দপুর চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির প্রধান সাধন সাঁওতাল বলেছিলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে জীবন পরিচালনা করি। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আমরা ‘মা’ বলে ডাকি। মা আমাদের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছেন জেনে আমরা খুবই আনন্দিত।

 

“শনিবার তিনি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আমরা আশা করি তিনি আমাদের একটি সুন্দর সমাধান দেবেন, তবে যে সমাধানই দেন না কেন, তিনি বললে আমরা কাজে ফিরে যাব।”

 

বাংলাদেশ নারী চা-শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি খায়রুন আক্তার বলেন, ‘আমরা ১৮ দিন ধরে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনে আছি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিষয়টি নিয়ে মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। যেহেতু আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক বিশ্বাস ও সম্মান করি এবং তিনি আমাদের নিজেদের লোক মনে করেন, তাই তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা তা-ই মেনে নেব। আশা করি, তিনি ৩০০ টাকা না হলেও এর কাছাকাছি আমাদের মজুরি নির্ধারণ করবেন।’

 

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৬ চা-বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। সেদিন থেকে চার দিন পর্যন্ত ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা।

 

এরপর গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোপুরি কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। গত ১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যান শ্রমিকরা।

 

এর মধ্যে কয়েক দফা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে থাকা চা-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তার দাবি জানিয়েছিল  চা শ্রমিকরা।

Please follow and like us: