মণিরামপুরে নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই দুই ব্রিজে ফাটল 71news24

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

 

পায়ের খোঁচায় খসে পড়ছে সিমেন্ট-বালু  নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই দুই ব্রিজে ফাটল

 মোঃ মেহেদী হাসান, মণিরামপুর :  যশোরের মণিরামপুরে নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই দুটি ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধানে মনোহরপুরের বাকেল খাল ও বালিয়ার খালের উপর ব্রিজ দুটি নির্মাণ হচ্ছে। ব্রিজ দুটি নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা। আগামী জুন মাসের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার কথা। অধিক লাভের আশায় প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং নিন্মমানের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ব্রিজ দুটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সম্প্রতি সরেজমিন গেলে এমনটি জানান খাল পাড়ের বাসিন্দারা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মণিরামপুর উপজেলায় তিন কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৯ টাকায় ২৩টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। যার মধ্যে মনোহরপুর এক নম্বর ওয়ার্ডে বালিয়ার খালের উপর ও তিন নম্বর ওয়ার্ডে বাকের খালের উপর প্রায় ২৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় ১৪ ফুট দৈঘ্যের দুটি ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। বালিয়ার খালের উপরের ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই পশ্চিম পাশের ডানের ইউনওয়াল ফেটে গেছে এবং রেলিং-এ ধস নেমেছে। আর বাকের খালের উপরের ব্রিজটির খাকুন্দি সরকারি প্রাইমারী স্কুলের পিছনের পাশে ডানের রেলিং এর গোড়ায় ফাটল রয়েছে। ফাটল রেখেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাকের খালের ব্রিজটি রঙ টেনে ইতিমধ্যে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন গেলে এক যুবক পা দিয়ে ব্রিজের রেলিং খুঁচিয়ে দেখান। তার পায়ের খোঁচায় রেলিং খসে পড়তে দেখা গেয়ে। যার ভিডিও চিত্র রয়েছে এই প্রতিবেদকের কাছে। আর বালিয়ার খালের ভাঙা অংশের দায়সারা সংস্কার চলছে। ফলে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে যে কোন সময় তা ধসে পড়তে পারে। জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় স্থানীয়রা বালিয়ার খালের ব্রিজটি ভেঙে নতুন করে করার দাবি জানিয়েছেন। বালিয়ার খালপাড়ের বাসিন্দা সুরেশ চন্দ্র বলেন, হঠাৎ গত নয় তারিখ রাত তিনটার দিকে অন্ধকারে স্কেভেটর এসে ব্রিজের দুই পাশে মাটি দিচ্ছিলো। আমরা টের পেয়ে মাটি ফেলতে নিষেধ করি। পরে সকালে এসে দেখি ব্রিজের একপাশ ফেটে গেছে। আর রেলিং ধসে রড বেরিয়ে পড়েছে। স্থানীয় দেবাশীষ ম-ল বলেন, ব্রিজের ফাটলের ছবি আমি মোবাইলে ধারণ করে ইউএনওকে কল করে জানাতে চেয়েছিলাম। অনেকবার কল হয়েছে, তিনি রিসিভ করেননি। তাদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় ও নিন্মমানের উপাদান ব্যবহার করায় ব্রিজটির এই দশা। বাকের খাল পাড়ের বাসিন্দা শাজাহান বলেন, একদিন রাত ১০টার দিকে দেখি স্কেভেটর এসে মাটি ভরাট করছে। সকালে উঠে দেখি ব্রিজ ফাটা। স্থানীয় মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, এই ব্রিজ দুটির নির্মাণ ঠিকাদার যশোরের সাগর নামের এক ব্যক্তি। প্রথম থেকেই তাকে কাজ ভাল করার জন্য বলেছি। ঢালাই চলার সময় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বরদের উপস্থিত রাখতে বলেছি। তিনি করেননি। ফলে ব্রিজ ফেটে গেছে। ব্রিজের ফাটা ছবি মোবাইলে তুলে পিআইওকে দেখিয়েছি। ব্রিজ ভেঙে নতুন করে করার কথা। আর বাকের খালের ফাটলের বিষয়টি আমার জানা নেই। বালিয়ার খালের ব্রিজ ভেঙে নতুন করে হচ্ছে না, ফাটল অংশে পুটিং দিয়ে লেভেল করা হচ্ছে, জানেন কিনা? এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘তা জানি না। পুটিং দিলেতো হবে না। এতে ব্রিজ চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।’ বাকের খালের ব্রিজটির কাজ পেয়েছিলেন যশোরের সিথি এন্টারপ্রাইজের কর্ণধর সমির মিত্র। তিনি কাজ না করে লভ্যাংশ নিয়ে তা নাহার এন্টারপ্রাইজের সাগরকে দিয়েছেন। জানতে চাইলে সমির মিত্র কাজ বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, মাঝে আমার সন্তান অসুস্থ ছিল। তাকে নিয়ে ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেখান থেকে ফিরে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পিআইও সময় দিতে চাননি। তিনিই কাজটি সাগরকে দিতে বলেছিলেন। ঠিকাদার হাবিবুর রহমান সাগর বলেন, স্কেভেটর মাটি ভরাট করতে গিয়ে ব্রিজ ফেটে গেছে। ফাটা অংশ ঠিক করে দেওয়া হবে। এসব বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি। ব্রিজ ভাঙার দায় তিনি সাংবাদিকদের উপর দিয়েছেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেওয়া হবে। বিষয়টি নিতে কথা বলতে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Please follow and like us: