শেখ গফ্ফার রহমান, একাত্তর নিউজ ২৪. ডেক্সঃ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের মামলায় ৫ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমীন।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের মামলায় ৫ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড- এ অধ্যাদেশ জারির পর এটিই প্রথম ফাঁসির রায়।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমীন এ রায় দেন। এসময় প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে অর্থদন্ডও দেন তিনি।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে, সাগর চন্দ্র, সুজন মনি ঋষি, রাজন, সনজিৎ এবং গোপি চন্দ্র শীল। এসময় সঞ্জিত চন্দ্র মণিঋষি ও গোপী চন্দ্র শীল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অন্য তিন আসামি এখনও পলাতক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০” সংশোধন করে (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর সংশোধনী ২০২০ এর ৯ এর (১)/৩৪ ধারা ) অধ্যাদেশ আকারে জারীর জন্য এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার আইনটি অধ্যাদেশ হিসেবে জারী করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি একেএম নাছিমুল আক্তার নাছিম জানান, ২০১২ সালে দণ্ডিত সাগর শীলের সাথে ভুঞাপুরের মাদ্রাসা ছাত্রীর মুঠোফোনে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই বছর ১৫ জানুয়ারী সাগর ভুঞাপুর এসে ওই ছাত্রীকে কৌশলে মধুপুরে নিয়ে যায়। মধুপুরের চারালজানি গ্রামে দণ্ডিত রাজনদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ওই ছাত্রীকে সাগরের সাথে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু বিয়েতে রাজি না হওয়ায় সাগর তাকে ধর্ষণ করে। পরে সেখানে আটকে রাখে। ১৭ জানুয়ারী রাতে মধুপুরে বংশাই নদীর তীরে নিয়ে পাঁচজন গণধর্ষন করে ফেলে রেখে যায়। পরদিন (১৮ জানুয়ারী) সকালে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে। পরে তার অভিভাবকরা এসে বাড়ি নিয়ে যায়।
ওইদিনই (১৮ জানুয়ারি) ওই ছাত্রী নিজে বাদী হয়ে দণ্ডিত পাঁচজনকে আসামী করে ভুঞাপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের দিনই পুলিশ আসামী সুজনকে গ্রেফতার করে। সুজন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে অন্যান্য আসামীরাও গ্রেফতার হয়।
তদন্ত শেষে ভুঞাপুর থানার পুলিশ দন্ডিত পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়।
মামলার বাদীকে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষ থেকে আইনগত সহায়তা দেয়া হয় বলে জানান, সংস্থাটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আতাউর রহমান আজাদ। তিনি জানান, রায়ে তারা সন্তুষ্ট। ন্যায্য বিচার তারা পেয়েছেন।
অপরদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা মিয়া জানান, রায়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।