একাত্তর নিউজ,যশোর অফিস :
যশোর জেলা যুবলীগের সম্মেলনকে সামনে নিয়ে সাবেক ছাত্র নেতারা আশা করছেন বঞ্চিত ও রাজপথে পরীক্ষিত কর্মীরা এবার মূল্যায়ন পাবেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পরিচয় হীনতা থেকে মুক্তি পাবেন তারা। তবে কে হবে সভাপতি-সম্পাদক তা নিয়ে বেশ রোমাঞ্চ সৃষ্টি হয়েছে।
সভাপতি-সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় আছেন যশোর জেলা যুবলীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ জাহিদুর রহমান লাবু, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, (বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), সহসভাপতি সৈয়দ মুনির হোসেন টগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ রায়, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, বর্তমান জেলা যুব লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঈন উদ্দিন মিঠু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম, পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিবুল আলম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন।
দেড় যুগ পর আগামী ২৩ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে জেলা যুবলীগের সম্মেলন। এর আগে গত ১ ডিসেম্বর যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেল উদ্দিন যশোরে বর্ধিত সভায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। তার পর থেকেই উজ্জীবিত হতে শুরু করেছে যশোরের যুব নেতারা। তবে কে কতটুকু জায়গা পাবেন তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত চাওয়া হয়েছে। কমিটিতে কে আসছেন তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিচ্ছেন। বর্তমানে যুবলীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা সবাই ঢাকায় অবস্থান করছেন। সবাই যার যার জায়গা থেকে কমিটিতে আসার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারা লবিং করছেন।
সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৯ জুলাই যশোর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। এতে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা যুবলীগের কমিটি হয়। ৫৩ সদস্যের এই কমিটির মেয়াদ ২০০৬ সালে শেষ হয়। অন্যদিকে ২০১৭ সালের ২১ মার্চ যশোর সদর ও শহর যুবলীগ এবং ২৯ মার্চ বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা এবং এপ্রিল ও মে মাসে মণিরামপুর, কেশবপুর, চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলা যুবলীগের তিন মাস মেয়াদি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তিন মাসের কমিটি ৪ বছরে গড়ালেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি কেউই। ওই সময় বেশ কয়েকটি উপজেলায় যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে পকেট কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব কমিটির নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ।
আগামী ২৩ জানুয়ারি সম্মেলন প্রসঙ্গে শেখ জাহিদুর রহমান লাবু ও জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, আমরা আশা করি সুন্দর একটি নেতৃত্ব আসবে। যারা পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে। যুবলীগকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। যাদের পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস আছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এমন পরিবার থেকে নেতৃত্ব উঠে আসুক। আমি আশা করবো জাঁকজমক ও সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্মেলন হবে এবং যোগ্যরাই জেলা যুবলীগের দায়িত্ব পাবেন।
যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল বলেন, দীর্ঘদিন নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে জেলা যুবলীগ। ১৫ বছরে জেলা ছাত্রলীগের তিনবার রদবদল হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ থেকে উঠে আশা ত্যাগী নেতারা আজ পরিচয় হীনতায় ভুগছে। অনেকেই নিজেকে যুবলীগ কর্মী হিসাবে পরিচয় দিলেও আসলে সে যুবলীগের কেউ না, কিন্তু রাজনিতির মাঠে থাকতে গেলে পরিচয় তো জরুরি। তাই আমি মনে করি ২৩ জানুয়ারীর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ত্যাগী কর্মীদের এই হতাশা কাটবে।
জেলা আওয়ামী যুব লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঈন উদ্দিন মিঠু বলেন, যারা গনতান্ত্রিক আন্দলোনে রাজপথে ছিল, ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্ব আসুক আগামী ২৩জানুয়ারী সম্মেলনের মাধ্যমে।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, জেলা যুবলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় নেতারা নিষ্ক্রীয় হয়ে গেছেন। তারা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেন না। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতেও অনুপস্থিত থাকেন। যশোরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাই যুবলীগের কর্মসূচি পালন করছেন। আমি আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যতেষ্ট বিচক্ষণ তারা নিশ্চয় আমাদের একটি পরিচ্ছন্ন কমিটি উপহার দেবেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, আমাদের আশা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যশোরের যুব নেতারা পরিচ্ছন্ন ও যোগ্যকে জেলা যুবলীগের সর্বচ্চো আসনে বসাবে। দীর্ঘদিন জেলা যুবলীগ নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে যার কারণে জাতীয় অনেক কর্মসূচিতে যুবলীগের সেই জৌলুস আর দেখা যায় না। আশা করি ২৩ জানুয়ারি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আবার যশোর জেলা যুবলীগ সুসংগঠিত হবে।
যশোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিবুল আলম বলেন, যুবলীগকে সংগঠিত করতে গেলে যুব নেতাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। অবশ্যই আমরা যোগ্য নেতাকে জেলা যুবলীগের সর্বোচ্চ আসনে দেখতে চাই। যে যুবলীগের সব স্তরের কর্মীদের নিয়ে কাজ করবে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রনেতা আলমগীর কবির সুমন বলেন, ২০০৩ সালে শেষ সম্মেলন হয় জেলা যুবলীগের পরে আর কোন সম্মেলন না হওয়ায় অনেক ছাত্রলীগ নেতা এখন পরিচয়হীনতায় ভুগছে। তাই আমাদের একটাই দাবি সুষ্ঠু সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জেলা কমিটি গঠিত হোক। যারা আওয়ামী লীগ পরিবারের সাথে জড়িত দীর্ঘদিন যারা রাজপথে কাজ করছে তাদের মধ্য থেকে যেন কেউ জেলা যুবলীগের দায়িত্ব পায়। হঠাৎ বসন্তের কোকিল হয়ে যারা দলে এসেছে তাদের যেনো দায়িত্ব না দেয়া হয়।
যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী বলেন, যুবলীগের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক এটাই সকলের প্রত্যাশা।