ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উপকূলে প্রবেশ করেছে অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সাগরদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে স্থলভাগে প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে ঝড়টি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিপথে রয়েছে সুন্দরবনের বদ্বীপ অঞ্চল।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উপকূলে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৃষ্টি। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকায়। সেসব জায়গায় তৈরি রয়েছে দেশটির বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তারা।
প্রবল ঝড়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ি-দোকান ও গাছ ভেঙে পড়েছে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মতো, প্রায় ঘন্টাখানেক সেখানে ধ্বংসলীলা চালাবে ‘সুপার সাইক্লোন’ বুলবুল। এরপর সেটি ধীরে ধীরে আরও স্থলভাবে প্রবেশ করবে বলে জানা যাচ্ছে। তখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
প্রশাসনের তরফে সবরকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যে ব্যবস্থা করা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। ঝড়ের তান্ডব কিছুটা শান্ত হলেই তারা উদ্ধারকাজ শুরু করবেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে
জানানো হয়েছে।
এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের ফ্রেজারগঞ্জে অবস্থান করছে অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে যাতে খুব দ্রুত উদ্ধারকার্য শুরু করতে পারে সে জন্যে তিনটি জাহাজ প্রস্তুত রেখেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এছাড়াও ১০ জন চিকিৎসকসহ একটি ডুবুরি দলকে প্রস্তুত রাখা রয়েছে।
কলকাতায়ও বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দফতর নবান্ন থেকে গোটা বিষয়টি তদারকি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও রয়েছেন পৌরসভার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে।
রোববার দুপুরের মধ্যে বুলবুলের শক্তিক্ষয় হবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরার দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বুলবুলের। সাগরদ্বীপে অনেক স্থানে কাঁচা বাড়ি, গাছপালা ভেঙে পড়েছে।
ট্রেনলাইনে গাছ পড়ে বাতিল হয়েছে শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল ট্রেন। হাওড়া পাঁশকুড়া এবং দিঘার মধ্যেও তিনটি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে রাজ্যের ওইসব উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, শনিবার রাত ৮টায় পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ উপকূলে ঝড়টি আঘাত হানতে পারে। একই সময় বাংলাদেশেও আঘাতের কথা জানায় তারা।
ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে বাঁক নিয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ক্রমশ পশ্চিমবঙ্গের দিকে আগানোর খবর জানা যায়। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, শনিবার রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ায় আঘাত হানতে পারে ভয়ঙ্কর এ ঘূর্ণিঝড়টি।
ভারতের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় বিশাল এলাকায় আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায় আছড়ে পড়বে। ঝড়টির গতিপথ অনুযায়ী সুন্দরবন এবং তার আশপাশেই আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সমতলের আরও কাছে চলে আসায় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগও ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর অবশ্য বলছে, গতিবেগ বেশি থাকলেও স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় গতি কমবে বুলবুলের।
তারা এও বলেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় ও গতি কমলেও তা হবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। শেষ মুহূর্তে যদি শক্তি বৃদ্ধি পায় তাহলে তা ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার গতিতেও তা আঘাত হানতে পারে।