একাত্তর নিউজ ডেস্ক: ইংল্যান্ডে যেন একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়ার নেশায় মজেছেন সাকিব আল হাসান। টনটনে উইন্ডিজের বিপক্ষে রেকর্ড রান তাড়া করা জয়ের ম্যাচে স্পর্শ করেছেন ওয়ানডেতে ৬ হাজার রানের মাইলফলক। তাতে ৬ হাজার রান আর ২৫০ উইকেট শিকার করা বিশ্বের চতুর্থ ক্রিকেটার বনে গেছেন, অনন্য এ ডাবল তিনি পূর্ণ করেছেন সব থেকে কম ম্যাচ খেলে। আজ আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করার হাতছানি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নামবেন তিনি। আর ৭৬ রান করলেই বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১ হাজার রান পূর্ণ করবেন সাকিব। সে সঙ্গে বল হাতে দুটো উইকেট পেলে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে ১ হাজার রান ও ৩০ উইকেট শিকারের ডাবলসও পূর্ণ হবে তার।
২০০৭ সালে বিশ্বকাপ অভিষেকের পর সাকিব খেলছেন নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের মেগা এ আসরে এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে সাত হাফসেঞ্চুরি আর দুই সেঞ্চুরিতে করেছেন ৯২৪ রান। বল হাতেও সমান তালে সাফল্য দেখিয়েছেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। মাত্র ৫.১৫ ইকোনমিতে তার শিকার ২৮ উইকেট। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সবশেষ মাচে ব্যাট হাতে শতকের সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনে শিকার করেন দুই উইকেট। ব্যাট-বলে দারুণ ছন্দে থাকা সাকিব অজিদের বিপক্ষেই বিশ্বকাপের নতুন এ মাইলফলক গড়তেই পারেন।
বিশ্বকাপের মঞ্চে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটারই এমন কীর্তি গড়তে পারেননি। কাছাকাছি ছিলেন লঙ্কান কিংবদন্তি সনাথ জয়সুরিয়া। ৩৮ ম্যাচে ১১৬৫ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ২৭ উইকেট। এই তালিকায় মাতারা হ্যারিকেনের পেছনেই আছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। ৩৩ ম্যাচে ৯৭৮ রানের সঙ্গে তার ঝুলিতে আছে ২৭ উইকেট। মেগা এ আসরে বল ও ব্যাট হাতে এমন পারফরম্যান্সের তালিকায় অন্যরা তাদের ধারে কাছেও নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস ৩৬ ম্যাচে ১১৪৮ রান ও ২১ উইকেট নিয়েছেন বিশ্বকাপ মঞ্চে। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব ২৬ ম্যাচে ২৮ উইকেটের পাশাপাশি করেছেন ৬৬৯ রান।
সাকিবের সঙ্গে নটিংহামে মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে শততম উইকেট পূর্ণ করতে নড়াইল এক্সপ্রেসের চাই আর মাত্র দুই উইকেট। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে টাইগার দলপতি স্বরূপে ফিরলেই তা অবলীলায় পূর্ণ হবে, এমনটা বলাই যায়। যদিও ইংল্যান্ডে এখনও নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেননি তিনি। সমালোচনার তোপেও পড়তে হয়েছে দেশের সবচেয়ে সফল এ অধিনায়ককে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে নিয়েছেন এক উইকেট। তবে উইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকলেও আট ওভারে মাত্র ৪.৬২ ইকোনমিতে দিয়েছেন ৩৭ রান।
এখন পর্যন্ত টাইগারদের ৮১টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। এ সময়ে ৩৪.১৬ গড়ে ৯৮ উইকেট শিকার করেন তিনি। বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীও তিনি। ২১৩ ম্যাচে টাইগার অধিনায়কের শিকার ২৬৬ উইকেট। অজিদের বিপক্ষে আজ দুই উইকেট শিকার করলেই বিশ্বের চতুর্থ অধিনায়ক হিসেবে শততম উইকেট শিকারীর তালিকায় নাম লেখাবেন মাশরাফি। এর আগে মাত্র তিনজন অধিনায়ক এই কীর্তি গড়তে পেরেছেন। যাদের দুজনই পাকিস্তানের। বিশ^কাপজয়ী পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরান খান অধিনায়কত্বের সময়কালে ১৩৯ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৩১ উইকেট। শততম উইকেট শিকারে ৯৬ ম্যাচ খেলতে হয়েছিল এ কিংবদন্তির।
আরেক কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম অধিনায়ক থাকাকালীন ১০৯ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৫৮ উইকেট। শততম উইকেট শিকারে তেমন সময় লাগেনি এই সুইং মাস্টারের। অধিনায়কত্বের ৬১ নাম্বার ম্যাচেই উইকেটের সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক নিজের নেতৃত্ব দেওয়া ৯৭ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৩৪টি। ৭৪ ম্যাচেই শততম উইকেট শিকার করেছেন এ সাবেক এই প্রোটিয়াস কাপ্তান। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি এখন তাদের পাশে নাম লেখানোর অপেক্ষায়।