একাত্তর নিউজ ডেস্কঃ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জোরপূর্বক বসতবড়ি ভাংচুরের অভিযোগে যশোর কেশবপুর পৌরসভার মেয়রসহ পাঁচজনকে বিবাদী করে যশোর আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা হয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছেন কেশবপুর উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শহীদউল্লাহ।মামলার বিবাদীরা হলেন- পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল, মধ্যকুল গ্রামের জয়নুদ্দিন সিকদারের ছেলে হাবিবুর রহমান, একই এলাকার রজব আলী, ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার, ও মণিরামপুর চিনেটোলা বাজারের হাসাডাঙ্গা গ্রামের ডাক্তার আব্দুলওহাব। সহকারী জজ জুয়েল রানা বিষয়টি আমলে নিয়ে বিবাদীদের প্রতি সমন জ়ারি করেন ।
বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ১৯৮৪ সালের ১৮ জানুয়ারী পৌর শহরের মধ্যকুল ওয়ার্ডে ১৫৩৪ সাবেক দাগ ও আর এস ৩৮২৬ দাগের ৫৫ শতক জমির মধ্যে ৩৮২ ও ৩৮৩ নং রেজিষ্টিকৃত কবলা দলিল মূলে যশোর সাতক্ষীরা সড়কের রাস্তা সংলগ্ন পূর্ব পাশে ২০ শতক জমি ক্রয় করেন। পরে সে জমি নামপত্তন করেন। অদ্যবধি যথানিয়মে করপ্রদান করে ভোগদখল করে আসছেন। সোনালী ব্যাংক থেকে গৃহ ঋন নিয়ে ওই জমির চারপাশে প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত করে চারটি দোকান ঘর, ১৪ কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা বসতঘর, সাতটি টি রান্না ঘর, সাত টি স্যানিটারি পায়খানা নির্মান করে বসবাস করে আসছেন। শহিদুল্লাহ ওই জমিক্রয় করে প্রাচীর দিয়ে ঘর নির্মানের প্রায় দুই বছর পর পাশ্ববর্তী শংকরি রানি সাহার ভাসুর অশোক সাহার ১৫৩২ দাগের জমি ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন হাবিবুর রহমান।
শংকরি রানি ও অশোক সাহার মধ্যে বিরোধপূর্ন জমি অল্প দামে ক্রয় করেন ডাক্তার হাবিবুর রহমান। জমি ক্রয়ের পর থেকে শংকরি রানির সাথে হাবিবুর রহমানে মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। বিরোধের সুত্র ধরে শংকির রানি তার জমির উপর দিয়ে হাবিবুর রহমানের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। হাবিবুর রহমান তার বাড়ি থেকে বের হবার রাস্তার জন্য বিভিন্ন জায়গার দেনদরবার করতে থাকেন। শংকরি রানির জমির উপর দিয়ে রাস্তা বের করতে না পেরে একপর্যায়ে তিনি শহিদুল্লাহের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মানের জন্য বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করতে থাকেন। এরপর ২০০৮ সালে পাশ্ববর্তী ডাঃ হাবিবুর রহমান ওই জমিতে রাস্তা নির্মানের দাবিতে যশোর আদালতে একটি মামলা করেন। যার নং- ১৩৩/০৮। এ মামলায় ঘটনায় ওই জমিতে রাস্তা আছে কিনা সরেজমিনে তদন্তের জন্য শহিদুল্লাহ আদালতে আবেদন করেন। আদালত সরেজমিন তদন্তের জন্য এ্যাডভোকেট আমিনুর রহমনাকে কমিশনার নিযুক্ত করেন। তিনি উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই ফিল্ড বুক,স্কেচ ম্যাপ ও অন্যান্য কাগজপত্রসহ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন। তদন্ত রিপোর্টে তিনি ওই ২০ শতক জমির উপর দিয়ে ইতিপূর্বে কোন চলাচলের রাস্তা ছিলনা বা পথ হিসেবে কোন আলামত পাওয়া যায়নি মর্র্মে উল্লেখ করেন। এঘটনার পর থেকে যশোর আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ফের ডাঃ হাবিবুর রহমান কেশবপুর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র, কেশবপুর থানা অফিসার ইনচার্জ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, যশোরের জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে একই অভিযোগ করেন। প্রত্যেকটি অভিযোগের সরেজমিনে স্ব স্ব দপ্তর তদন্ত করে ওই জমিতে বসতঘর থাকায় সেটা ভেঙ্গে রাস্তা হবে না মর্মে আদেশ প্রদান করেন। পরে কেশবপুর পৌরসভায় রফিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হবার পর তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন হাবিবুর রহমান। এরপর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম হাবিবুর রহমানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জোরপূর্বক শহিদুল্লাহ এর বসত বাড়ি ভেঙ্গে রাস্তা নির্মান করে দেবেন বলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকে। এরপর শহিদুল্লাহ ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর ওই জমিতে পৌর মেয়রের বিরদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে ওই ২০ শতক জমিতে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পৌর মেয়রের উপরে যথাযথভাবে জারি করা হয়। আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আদালতের গত ৩০ আগষ্ট সকালে পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলামের নির্দেশে পৌরসভার কর্মকর্তা- কর্মচারী ও ৫০/৬০ জনের একদল সন্ত্রাসী পৌরসভার ময়লাবহকারী ট্রাক, ঘর ভাঙ্গার যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে শহিদুল্লাহ এ বসত ঘর ভেঙ্গে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ভাংচুরকৃত টিন ও ইটসহ অন্যান্য মালামাল পৌরসভার গাড়িতে করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শহিদউল্লাহ নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় ক্ষতিপূরন দশ লাখ টাকা বাবদ পৌরসভার মালামাল ক্রোকসহ মেয়রকে দেওয়ানী কারাগারে আটকের দাবি জানানো হয়।