একাত্তর নিউজ, যশোর অফিস:
দেশের এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান মহাসড়ক ‘যশোর-খুলনা মহাসড়ক’র পুনর্নিমাণে ধীরগতি ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোয়া তিনশ’ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় টাকা জলে যাওয়ার আশঙ্কা সড়কে চলাচলকারীদের। অভিযোগ কারীদের দাবি, পাঁচ ফুট খুঁড়ে সড়ক পুনর্নিমাণের কথা থাকলেও তা ৩/৪ ফুটের বেশি খোঁড়া হচ্ছে না। আবার সেখানে পুরানো ইট, বালি, খোয়া, মাটি যা পাওয়া যাচ্ছে সবই ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু অংশ কার্পেটিং করা হলেও তা কয়েকদিনের মধ্যেই গাড়ির চাকার সাথে উঠে যাচ্ছে। আর এ বছরের মধ্যে পুনর্নিমাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও ধীরগতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানা গেছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যশোর-খুলনা মহাসড়ক। শিল্প শহর নওয়াপাড়া ও খুলনার কারাখানাগুলোর জন্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা কাঁচামাল পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম এ মহাসড়কটি। এছাড়া খুলনার সাথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে যাতায়াতে প্রতিদিন সড়কটিতে চলাচল করে শত শত পরিবহন। সংগত কারণে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের কাছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি এটি। সেই বিবেচনায় নতুন করে মহাসড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩২১ কোটি ৫৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
কিন্তু এরই মধ্যে সড়কটি নির্মাণে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এলাকাবাসী ও সড়কে চলাচলকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে মিললো তার প্রমাণ। রোববার দুপুরে সড়কটির রূপদিয়া পার হয়ে চাউলিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো পুরাতন খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই খোয়ার মান এতোই খারাপ যে, সামান্য আঘাতেই তা ভেঙে ধুলোয় পরিণত হচ্ছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা এমন মানহীন উপকরণ দিয়ে পুনর্নিমাণ করা হলে দ্রুতই আগের মতো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে যশোর-খুলনা এ মহাসড়কটি। ফলে সরকারের বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকার সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ।
সড়কে চলাচলকারীরা আরো জানান, যশোর-খুলনা মহা সড়কের চাপাতলা থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত কার্পেটিং করা হয়েছিল। কিন্তু মালবাহী ট্রাকের চাকার সাথে কয়েকদিনের মধ্যেই সে কার্পেটিং উঠতে শুরু করে। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই কার্পেটিং তুলেও ফেলেছে। এসব কারণে সড়কে চলাচলকারী ও স্থানীয় লোকজন কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেলো, সড়কটির যশোরের পালবাড়ি থেকে চাঁচড়া মোড় হয়ে মুড়লী দিয়ে যশোর সদর উপজেলার পদ্মবিলা পর্যন্ত একটি প্যাকেজে সড়ক পুনর্নিমাণের কাজ হচ্ছে। এই ১৯ কিলোমিটার পুনর্নিমাণে ১৫৭ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার কার্যাদেশ পেয়েছে তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড ও মাহবুব ব্রাদার্স (প্রাইভেট) লিমিটেড।
আর দ্বিতীয় প্যাকেজে পদ্মবিলা থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত আরো ১৯ কিলোমিটার পুনর্নিমাণে তমা কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকার কার্যাদেশ পেয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পুনর্নিমাণের জন্য পাঁচ ফুট গভীর করে খোঁড়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ স্থানে তিন থেকে চার ফুট খোঁড়া হয়েছে। আবার চাউলিয়া ও গোপালপুর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে না খুঁড়ে রাতের আঁধারে সরাসরি রুলার দিয়ে সমান করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
কাজের মান নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষও করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যশোর-খুলনা মহাসড়কটি দুইটি প্যাকেজের মাধ্যমে চলতি বছরের মধ্যে পুনর্নিমাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। সেই হিসেবে সাড়ে চার মাসের মতো সময় বাকি থাকলেও ৩০ শতাংশের বেশি কাজ এখনো বাকি আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে কাজের এই ধীরগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের এক সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলেও জানা গেছে। এরপর অবশ্য নড়েচড়ে বসেছেন কর্মকর্তারা। তারা আবহাওয়াকে দায়ী করে কাজ শেষ করার জন্য কিছুদিন সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যশোরের দুইটি মহাসড়ক পুনর্নিমাণে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। আমরা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে বিটুমিন দেয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য আগামী জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চলছে।
কাজের মান নিয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, যশোর-খুলনা ও যশোর- বেনাপোল মহাসড়ক পুনর্নিমাণ কাজ অত্যন্ত উঁচু মানের হচ্ছে। কার্যাদেশ মেনে মানসম্মত পুরাতন খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সড়কের মান কমবে না।