যশোর প্রতিনিধিঃ
যশোরের মণিরামপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এরমধ্যে রোহিতা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড (রাজবাড়ীয়া-এড়েন্দা) গ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ সর্বাধিক। এই ওয়ার্ডে গত একমাসে নারী-শিশুসহ অন্তত ৮৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রায় প্রতি বাড়িতে এই জ্বরে ভুগছেন দুই-একজন করে। আবার নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। ফলে ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছেন ওই ওয়ার্ডের মানুষ।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকালে সরেজমিন জানা যায়, ওয়ার্ডের এড়েন্দা বিলপাড়ায় ৫২ জন, দক্ষিণ পাড়ায় ১৪ জন ও রাজবাড়ীয়া গ্রামে অন্তত ২০-২৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও সরকারিভাবে পাওয়া তথ্য মতে এড়েন্দা গ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫২ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ১০-১২ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে বেশির ভাগ রোগী স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক নাসির উদ্দিনের কাছে ঝুঁকি দিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, মাস খানেক আগে এড়েন্দা গ্রামের তপতি দাস ঢাকায় তার এক ছেলের কাছে বেড়াতে গিয়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন। সেখান থেকে নাম মাত্র চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। বাড়ি ফিরে তিনি অনিরাপদভাবে চলাফেরা করেন। তপতি রানীর পর ডেঙ্গু আক্রান্ত হন তার ছেলে স্কুল শিক্ষক সঞ্জয় দাস। এরপর ধীরে ধীরে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত আবস্থায় রাজবাড়ীয়া গ্রামের সেকেন্দারের স্ত্রী রেবেকা বেগম মারা গেছেন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ওই গ্রামের মমতা বেগম আক্রান্ত হন ১০ দিন আগে। অবস্থা বেগতিক দেখে গত মঙ্গলবার তাকে ঢাকা সরোওয়ার্দী মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করেন চিকিৎসক। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর তাকে আইসিইউতে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। আর্থিক অনটন থাকায় স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় বাড়িতে কবিরাজি চিকিৎসা চলছে তার। এছাড়া নাসিমা বেগম নামে এক গৃহবধূকে শুক্রবার সকালে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি রাজবাড়ীয়া-এড়েন্দা গ্রামে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম,ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুভ্রা রানী দেবনাথ, কৃষি কর্মকর্তা হিরক সরকার, কীট তত্ত্ববিদ ডা. আমিনুল ইসলাম,স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিমসহ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা অভিযানে অংশ নেন। অভিযানকালে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান মেলে এড়েন্দা গ্রামের কয়েক স্থানে জমে থাকা পানিতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা শুভ্রা দেবনাথ বলেন, বৃহস্পতিবার দিনভর এড়েন্দা গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন হাসপাতালের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে ৫২ ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। যাদের নাম তালিকা আমরা ঢাকায় পাঠিয়েছি। এছাড়া ওই গ্রামে কয়েকটা বাড়িতে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য সংগ্রহ করেছেন কীটতত্ত্ববিদ ডা. আমিনুল ইসলাম।
ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, বৃহস্পতিবার সারা দিন এড়েন্দা গ্রামে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানো হয়েছে। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য ‘আকিক’ নামক এক ধরনের বিষ স্প্রে করা হয়েছে। গ্রামে দলগতভাবে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানোর জন্য এলাকাবাসীকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী সোমবার উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা সভা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।